ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক: চীন-পাকিস্তান সংলাপ, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নিরাপত্তা ইস্যুতে দিল্লির কৌশলগত নজর

প্রকাশিত: ৮:০৩ অপরাহ্ণ, জুন ২৭, ২০২৫
ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের সংসদীয় কমিটিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ, ধর্মীয় মৌলবাদ, নির্বাচন ও ভারতের ভাবমূর্তি নিয়ে আলোচনা—জয়সোয়ালের বক্তব্যে কূটনৈতিক ইঙ্গিত

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল জানিয়েছেন, অনুকূল পরিবেশে ভারত-বাংলাদেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী নয়াদিল্লি। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন দিক পরিচালনার জন্য ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠিত কাঠামো রয়েছে।”

রণধীর জয়সোয়ালের এই বক্তব্য এমন সময়ে এসেছে, যখন ভারতের সংসদীয় পররাষ্ট্রবিষয়ক স্থায়ী কমিটি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশেষ বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। এই বৈঠকে অংশ নেবেন—

  • ভারতের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শংকর মেনন
  • অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতা হাসনাইন
  • ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাস
  • জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অমিতাভ মাত্তু

১৯৯৬ সালের গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জয়সোয়াল বলেন,
“আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সংলাপে সব বিষয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত।”

সম্প্রতি ১৯ জুন চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক নিয়ে জয়সোয়াল বলেন,
“আমাদের প্রতিবেশী দেশে যেসব পারিপার্শ্বিক ঘটনা ভারতের স্বার্থ ও নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, সেসব ঘটনা আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।”

তিনি আরও যোগ করেন, প্রতিটি দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক স্বাধীনভাবে গড়ে উঠলেও “পারিপার্শ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তা মূল্যায়ন করা হয়।”

 

ভারতের জাতীয় দৈনিক দ্য হিন্দু জানিয়েছে, সংসদীয় কমিটির বৈঠকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে:

  • বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি
  • ধর্মীয় মৌলবাদের উত্থান
  • রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতা
  • এসব কারণে ভারতের নিরাপত্তার ওপর সম্ভাব্য প্রভাব
  • শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ
  • বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারতের নেতিবাচক ভাবমূর্তি
  • অতিরিক্তভাবে, ভারতের এককভাবে শেখ হাসিনাকে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগের বিশ্লেষণ

বিশেষজ্ঞদের মতানুযায়ী, অনেক বাংলাদেশি মনে করেন, ভারত সরকার বাংলাদেশের জনগণের পাশে না থেকে শুধু একটি নির্দিষ্ট সরকারকেই সমর্থন করে যাচ্ছে, যা দুই দেশের জনগণের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করছে।

দ্য হিন্দু জানিয়েছে, সংসদীয় কমিটি ভারতীয় আইনপ্রণেতাদের পরামর্শ দিতে পারে, যেন তারা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখেন। একই সঙ্গে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের কাছে কৌশলগত প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরার কথাও আলোচনায় আসতে পারে।