“Bystander Effect ও বাংলাদেশ: নীরবতা এখন ভয়ংকর সামাজিক ব্যাধি” (একটি সমাজ তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ।) দৈনিক চৌকস দৈনিক চৌকস প্রকাশিত: ১১:২৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৫, ২০২৫ আল-আমিন,স্টাফ রিপোর্টার(ক্রাইম),শেরপুরঃ দেশের বিভিন্ন স্হানে বর্বর নির্যাতন ও হত্যাকান্ডের পরিস্হিতি নিয়ে শ্রদ্ধেয় ‘শিক্ষক প্রশিক্ষক ও গবেষক ‘ জনাব মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার’ স্যার এর কাছে জানতে চাইলে তিনি তাঁর গবেষণা চিন্তন দক্ষতা সম্বন্ধে জানান – ঢাকার মিটফোর্ডে ৯ জুলাই ২০২৫–এ সোহাগকে প্রকাশ্যে পাথর দিয়ে হত্যার ভিডিও দেখে স্তব্ধ হয়েছে গোটা দেশ। কিন্তু ভিডিওতে দেখা যায়, ২০–২৫ জন মানুষ পাশে দাঁড়িয়ে ছিল—তারা কেউ এগিয়ে আসেনি, কেউ বাধা দেয়নি, বরং কেউ কেউ ভিডিও করছিল। এটি শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়—মানবতা, সাহস ও সামাজিক দায়বদ্ধতার চূড়ান্ত পতনের প্রতীক। এই আচরণকে অপরাধবিজ্ঞানে বলা হয় “Bystander Effect”, অর্থাৎ পাশেই দাঁড়িয়ে থেকে কিছু না করা—যা এখন বাংলাদেশে এক ভয়ংকর সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। Bystander Effect: তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা Bystander Effect প্রথম আলোচনায় আসে ১৯৬৪ সালে কিটি জেনোভেস নামের এক নারীর নিউইয়র্কে খুন হওয়ার ঘটনায়। ৩৮ জন মানুষ তার আর্তনাদ শুনেও কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। এর মূল কারণ: ১. Diffusion of Responsibility: সবাই ভাবে, “অন্য কেউ করবে।” ২.Fear of Harm: হস্তক্ষেপ করলে নিজের ক্ষতি হতে পারে। ৩. Social Proof: অন্যরা কিছু করছে না, তাই আমিও করব না। ৪. Deindividuation: ভিড়ে নিজের পরিচয় হারিয়ে ফেলা। এই চারটি কারণে মানুষ নিজের মানবিক ও সামাজিক দায়িত্ব ভুলে যায়। বাংলাদেশে এর উদাহরণ ও ভয়ংকর দিক ১. সোহাগ হত্যাকাণ্ড (২০২৫) মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে একজন মানুষকে পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়। ২০–২৫ জন পাশেই দাঁড়িয়ে, কেউ থামায়নি, কেউ হেল্প চায়নি। এর মধ্যে কেউ ভিডিও করছিল—এটাই এখন নতুন বাণিজ্য: ‘ভিউ পাওয়ার মানসিকতা।’ ২. মিরপুরে গৃহবধূকে নির্যাতনের সময় পাশের ফ্ল্যাটের নীরবতা স্ত্রী নির্যাতনের আওয়াজ দিনের পর দিন শুনেও প্রতিবেশীরা চুপ থেকেছে। শেষে নারীর মৃত্যু হয়—তদন্তে উঠে আসে, “এটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার মনে করে কেউ হস্তক্ষেপ করেনি।” Albert Bandura-র “Moral Disengagement” তত্ত্ব অনুযায়ী: মানুষ অন্যায় দেখেও নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে নিজেই যুক্তি বানায়— “ওর সমস্যা, আমার না।” “আমি গেলে বিপদে পড়ব।” “আমি ছোট মানুষ, কী করব?” এই মানসিকতা নৈতিক বিচ্ছিন্নতা (Moral Disengagement) সৃষ্টি করে। ভিউয়ের দুনিয়ায় মানবতা লোপ আজকাল মানুষ সাহায্য করার চেয়ে আগে মোবাইল তোলে ভিডিও করতে। কারণ “ভিডিও ভাইরাল হলে নাম হবে” “পুলিশে না গিয়ে ফেসবুকে শেয়ার করলেই চলবে” এই Digital Voyeurism এবং Spectator Mentality সমাজকে নীরব, নির্মম ও অমানবিক করে তুলছে সমাধানের উপায় ১.স্কুল, কলেজে Life Skills Education এর অন্তর্ভুক্ত করে শেখাতে হবে—কখন ও কিভাবে কেউ বিপদে থাকলে সহায়তা করতে হয়। ২.যে ব্যক্তি সাহস করে কাউকে রক্ষা করবে, তাকেই যদি হয়রানির শিকার হতে হয়—তবে ভবিষ্যতে কেউ আর এগিয়ে আসবে না। Good samaritan law চালুকরা। সেটা হল, সাহায্যকারী যেন কোন বিপদে বা ঝামেলায় না পড়ে, সে আইন চালু করা। সাহসি ব্যাক্তিকে ভাল কাজের জন্য পুরুস্কৃত করা। ৩. ধর্মীয় ও সামাজিক বার্তা জোরদার মসজিদের ইমাম, অন্যান্য ধর্মীয় নেতা যেমন পুরোহিত, পাদ্রী, যাজক, ভান্তে, শিক্ষক, কমিউনিটি নেতা ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, এন জি ও, সরকারি কর্মকর্তা —সকলকে সামাজিক দায়বদ্ধতা ও মানবিকতা নিয়ে প্রচারণা চালাতে হবে। ৪. প্রশিক্ষিত নাগরিক নজরদারি দল জনসচেতনতা তৈরি করে একটি “কমিউনিটি রেসপন্স টিম” গঠন করা যেতে পারে যারা স্থানীয় পর্যায়ে বিপদে প্রতিক্রিয়া জানাবে। SHARES নাগরিক সংবাদ বিষয়: