মোরেলগঞ্জে লবণাক্ত পতিত জমিতে মাঠজুড়ে সূর্যমূখীর হাঁসির ঝিলিক।

প্রকাশিত: ৯:২৩ অপরাহ্ণ, মে ১৭, ২০২৫

বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ

সূর্য যখন যেদিকে হেলছে, সূর্যমুখী ফুলও সেদিকে হেলে পড়ছে। চারদিকে হলুদ ফুলের মন মাতানো রূপ।বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের উপকূলীয় শস্যভাণ্ডার নামে খ্যাত উর্বর ভূমি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ !

সূর্য্যমুখী চাষে ভালো ফলনে কৃষকের মাঠ জুড়ে এখন সুর্য্যরে হাঁসির ঝিলিক। লবণাক্ত পতিত জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষে সফলতা এসেছে। স্বল্প খরচে বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে সূর্যমূখীর হাঁসির ঝিলিক।পতিত জমিতে সল্পসময়ে অধিক লাভের আশায় স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় হচ্ছে সূর্যমুখীর চাষ। সবুজ গাছের ফাঁকে ফাঁকে শোভা পাচ্ছে সূর্যমুখীর হাসি।

চলতি মৌসুমে সূর্যমুখী চাষ করে বেশি লাভের স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা। সূর্যমুখী ফুলের অপরূপ এ দৃশ্য দেখতে ছেলেমেয়েরা ছুটছেন উপজেলার বিভিন্ন জমিতে। বিঘা প্রতি ফসল পাচ্ছেন ৮মন, বাজার দরে বিক্রয় নামবে ৩৫-৪০ হাজার টাকা। এ বছরের বাম্পার ফলনে আগামিতে আরও আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে বলে চাষিরা বলছেন। স্থানীয় চাষিদের দাবি সরকারি ভাবে বিনামূল্য বীজ,সার ও প্রণোদনা বৃদ্ধি করার।

সরেজমিনে ও কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ভাইজোড়া, কাঠালতলা ও বিশারীঘাটা গ্রামের শতাধিক কৃষক দেশি আমন ধান ঘরে তোলার পর এবারে ২০ হেক্টর ফসলি পতিত জমিতে সূর্য্যমুখী চাষ করে বাম্পার ফলন ফলিয়েছে। রোপনের ১০০ দিন পরে স্বল্প সময়ে প্রতিটি কৃষকেরা এ ফসল উৎপাদন করে নিজেদের সংসারের চাহিদা মিটিয়েও বাজারে বিক্রয় করে অধিক লাভবান হচ্ছেন। চাষিরা প্রতিবিঘা জমিতে চাষাবাদ ও শ্রমিকদের মজুরী ৫ হাজার টাকা ব্যায় করে ফসল বিক্রি করছেন প্রায় ৪০ হাজার টাকা।

মাঠে গিয়ে কথা হয় কাঠালতলা গ্রামের কৃষক মো: মোয়াজ্জেল হোসেন এর সাথে, তিনি ১ বিঘা জমিতে সূর্য্যমুখী চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছে। তার ব্যায় হয়েছে ৫ হাজার টাকা প্রতি বিঘায় ৭-৮মন ফসল পেতে পারেন। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রতিমন বীজ ৪ হাজার টাকা করে বিক্রি নামবে ৩৫-৪০ হাজার টাকা। আর মাত্র ২ সপ্তাহ পরে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন।

ভাইজোড়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম হাওলাদার তিনি ২ বিঘা জমিতে সূর্য্যমুখী চাষকরে ভালো ফলন পেয়েছে। তার ব্যায় হয়েছে ১০ হাজার টাকা প্রতি বিঘায় ৭-৮মন ফসল পেতে পারেন। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রতিমন বীজ ৪ হাজার টাকা করে বিক্রি নামবে ৩৫-৪০ হাজার টাকা। আর মাত্র ২ সপ্তাহ পরে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন।

একই গ্রামের শহিদুল ইসলাম লিটন ৩ বিঘা জমিতে সূর্য্যমুখী চাষ করেছেন। গত বছরের চেয়ে দ্বিগুন ফসল হয়েছে তার। বিঘা প্রতি ৬ মন করে ফসল ঘরে নিতে পারবেন বলে আশা করছেন।

রুবেল শেখ ৩ বিঘা জমিতে ফসল ফলিয়েছেন, ছালমা বেগম ১ বিঘা, আশ্রাব আলী খন্দকার ২ বিঘা, বশির আহম্মেদ ৩ বিঘা, আরিফুল ইসলাম তালুকদার ১ বিঘা, মালেক তালুকদার ১ বিঘা এ ছাড়াও পাশ্ববর্তী কাঠালতলা, বিশারীঘাটা গ্রামের একাধিক কৃষক এ সূর্য্যমুখী চাষ করে বাম্পার ফলন ফলিয়েছেন। চাষিরা বলেন, কোলষ্টেরল মুক্ত নিবাপদ স্বাস্থ্য’র জন্য উপযোগী এ তৈল। তাদের সংসারের চাহিদা মিটিয়েও সূর্য্যমুখী তৈল বাজারে বিক্রয় করতে পারছেন। স্বপ্ল সময়ে অধিক লাভবান হচ্ছেন যেমন, অন্য দিকে সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পারছেন।

স্থানীয় এ সকল কৃষকদের দাবি এ ফসলের বীজ ভাঙ্গানোর পরে অবশিষ্ট ফল গাছের ছোবরা দিয়ে বায়োগ্যাস উৎপাদন করে জ্বালানী চাহিদা অনেকটা মিটানো সম্ভব। তবে সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সহযোগীতা পেলে বায়োগ্যাস উৎপাদনও বৃদ্ধি করতে পারবে কৃষকরা। পাশাপাশিও তারা সরকারি সহযোগীতা বৃদ্ধি করার জন্য দাবি জানান।

সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: জাকির হোসেন বলেন, কৃষি অধিদপ্তরের মাধ্যমে অধিক ফসল উৎপাদনের জন্য কৃষকদের আধুনিক প্রশিক্ষন ও প্রনোদনা দেয়া হয়েছে। যার ফলে দেশী আমন ফসল ঘরে তোলার পরে পতিত জমিতে নতুন নতুন একাধিক ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। এ ভালো ফসল দেখে আগামীতে কৃষকদের আরো আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে।মোরেলগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটি সভাপতি এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির জানান, সূর্যমূখী চাষিদের কে সার, বীজ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করে কৃষি বিভাগ। বিভিন্ন সীড কোম্পানি পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে সার ও বীজ দিয়ে গরীব কৃষকদের সহযোগিতা করতে হবে।

এ বিষয় উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, এ উপজেলায় এ বছর ১১০ হেক্টর জমিতে সূর্য্যমুখী চাষ হয়েছে। এর মধ্যে মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ২০ হেক্টর। এছাড়াও খাউলিয়া, বনগ্রাম, বলইবুনিয়া, হোগলাপাশা, চিংড়াখালী ও হোগলাবুনিয়ায় এ ফসল উৎপাদন করেছেন কৃষকেরা। উচ্চমানের এ ভালো ফলনে এবং বাজার দর ভাল থাকার কারনে আগামীতে এ সূর্য্যমুখী চাষে কৃষকদের দিন দিন আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।এ কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, সূর্যমুখী তেলের পুষ্টিগুণ যেমন বেশি তেমনি অন্যান্য তেলের তুলনায় এটি অধিক স্বাস্থ্যসস্মত। অধিক হারে এর চাষ বৃদ্ধি করা গেলে পুষ্টি চাহিদা অনেকাংশে পূরণ হবে এবং ভোজ্যতলের জন্য বিদেশ নির্ভরতা কমে যাবে। এছাড়া আগামীতে কেউ যদি নতুন করে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হয় তাহলে আমরা সব সময় তাদের পাশে থাকবো।