মোরেলগঞ্জ বাসির প্রাণের দাবি আধুনিক বাংলা-চায়না হাসপাতাল স্থাপন ।

প্রকাশিত: ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ, মে ১৩, ২০২৫

বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের উপকূলের সুপার সাইক্লোন সিডর-আইলা-নার্গিস রিমালের আঘাতে লন্ডভন্ড বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ শরণখোলাবাসীর একমাত্র দাবি মোরেলগঞ্জে আধুনিক বাংলা-চায়না হাসপাতাল স্থাপনের । ২ উপজেলার এখন মানবিক বিপর্যয়ের এক নাম। ১০ লক্ষ মানুষের বসবাস এ ছোট্ট ভূখণ্ডে। এত বিশাল জনসংখ্যার চাপে শুধু জীবনযাত্রাই বিপর্যস্ত নয়, স্বাস্থ্যসেবার ওপরও নেমে এসেছে নজিরবিহীন সংকট, বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ঘাটতি। সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো এই বিপুল জনগোষ্ঠীর চিকিৎসার ভার বহন করতে সম্পূর্ণরূপে অক্ষম হয়ে পড়েছে। রোগবাহিত ব্যাধির প্রাদুর্ভাব, পানি ও বায়ুবাহিত রোগ, অপুষ্টি, মাতৃমৃত্যু ও নবজাতক মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে। দিন দিন অসুস্থ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, আর সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল।

সরকারি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার জরিপ অনুযায়ী, সুন্দরবনের উপকূলের বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ শরণখোলায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে ডায়রিয়া, হেপাটাইটিস, চর্মরোগ, নিউমোনিয়া, জন্ডিস, শ্বাসকষ্টজনিত রোগ, এবং মানসিক অবসাদ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যাম্পে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, অপর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও বিশুদ্ধ পানির অভাব— এসবই রোগ ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিদিন গড়ে ৮০০-৯০০ রোগীর চাপ সামলাতে গিয়ে নাজেহাল হয়ে পড়ছে। অথচ সেখানে রোগীর সেবা দেওয়ার মতো ডাক্তার রয়েছেন মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন। প্রয়োজনীয় ওষুধ, অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি সেবা, ল্যাব সুবিধা—সবকিছুর অভাব প্রকট।

স্থানীয় হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতেও দেখা যাচ্ছে দীর্ঘ লাইন, অব্যবস্থাপনা এবং সময়মতো চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ। ফলে রোগীরা বাধ্য হচ্ছেন বাগেরহাট সদর হাসপাতাল কিংবা খুলনায় গিয়ে চিকিৎসা নিতে—যেখানে পৌঁছাতেই সময় লাগে ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত। অনেক সময় সে সময়টুকুই জীবন-মৃত্যুর পার্থক্য গড়ে দেয়।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এইচ. এম. শহিদুল ইসলাম
বলেন, মোরেলগঞ্জ শরণখোলা স্বাস্থ্য খাতের দীনতা আজ বাগেরহাট জেলাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লজ্জার মুখে ফেলছে। আমাদের ওপর মানবিক দায়িত্ব চাপিয়েছে ঠিকই, কিন্তু আমাদের নিজেদের জনগণ যেন অবহেলিত না হয়। এখনই সময় আধুনিক হাসপাতাল স্থাপন করে সমস্যার সমাধান করার।

বাগেরহাট রিপোর্টার্স ইউনিটি সভাপতি এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির বলেন, বাড়তি জনসংখ্যার চাপে শুধু পরিবেশই নয়, জনস্বাস্থ্য আজ হুমকির মুখে। আধুনিক হাসপাতাল ছাড়া এই জনপদে একটি বড় বিপর্যয় আসন্ন।

ডা. নাদিরুজ্জামান আকাশ আবাসিক মেডিকেল অফিসার, মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জানান, আমরা প্রতিদিন আমাদের সক্ষমতার চেয়ে ৯-১০ গুণ বেশি রোগী সামলাচ্ছি। ডাক্তার, নার্স, যন্ত্রপাতি, ওষুধ—সব কিছুতেই ঘাটতি। রোগী ঠিকমতো বিছানা পায় না, সেবা তো অনেক দূরের কথা।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ফকির রাসেল আল ইসলাম বলেন, নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। প্রসূতি মায়েদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল ছাড়া এই দুর্দশা দূর হবে না।

মোরেলগঞ্জ শরণখোলা-৪ আসনের মাটি ও মানুষের নেত্রী, বাগেরহাট জেলা বিএনপি’র মনিটরিং টিমের অন্যতম সদস্য এডভোকেট ফারহানা জাহান নিপা বলেন,তরুণ সমাজ সচেতন, কিন্তু আমরা অসহায়। চিকিৎসার জন্য রাত পার করা যে কত কষ্টকর, তা নিজের চোখে না দেখলে বোঝা যায় না।

মোরেলগঞ্জ উপজেলার ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বাগেরহাট জেলা যুবদলের সাবেক সদস্য, সেলিমাবাদ ডিগ্রী কলেজের সাবেক ভিপি শেখ সুজাউদ্দিন সুজা বলেন, চিকিৎসা শুধু একটি সেবা নয়-এটি একধরনের সম্মান। আমাদের সম্মানটুকুই আমরা হারিয়ে ফেলছি।

মোড়েলগঞ্জের কৃতি সন্তান, যুবকদের আইকন, সাবেক বাগেরহাট জেলা ছাত্রদলের সহ সংগঠনিক সম্পাদক, বর্তমান ৭১ মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রাম পরিষদের সচিব জনাব ইঞ্জিনিয়ার মাকসুদুর রহমান মামুন বলেন, একটি হাসপাতাল শুধু রোগী নয়, পুরো সমাজকে সুস্থ রাখে। যদি চিকিৎসা সুবিধা কাছাকাছি থাকে। তিনি বলেন দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ, তাই এই জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে সকলের প্রচেষ্টা একান্ত কাম্য।

বর্তমান বাস্তবতায় বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে-শরণখোলা জনপদে একটি পূর্ণাঙ্গ ‘বাংলা-চায়না আধুনিক হাসপাতাল’ স্থাপন শুধু সময়ের দাবি নয়, এটি মানবিক কর্তব্য। দীর্ঘদিনের আন্দোলন, জনমত, প্রতিবেদন, মিডিয়ার কাভারেজ সত্ত্বেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। একযোগে এগিয়ে আসতে হবে।