ঢাকায় এক কেজি স্বর্ণ ছিনতাই: ছয়জন গ্রেফতার, ৯২৮ গ্রাম উদ্ধার

প্রকাশিত: ৬:০৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিনিধি: 

রাজধানীর কোতয়ালী থানাধীন কোর্ট বিল্ডিংয়ের সামনে এক কেজি স্বর্ণ ছিনতাইয়ের ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ। অভিযানে ছিনতাই হওয়া স্বর্ণের মধ্যে ৯২৮ গ্রাম উদ্ধার করা হয়েছে।

 

ডিবির কর্মকর্তারা জানান, আটককৃতরা সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য। দীর্ঘদিন ধরে তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও বিক্রেতাদের টার্গেট করে এ ধরনের অপরাধ করে আসছিল। তদন্তে উঠে এসেছে, চক্রটি অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এই ছিনতাই সংঘটিত করেছে।

ঘটনার বিবরণ :

২৭ নভেম্বর ২০২৪, রাত আনুমানিক ৯:৩০ মিনিট।

 

তাঁতিবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রদেশ বাবুর দোকানের কর্মচারী রাজীব দাস এক কেজি বিক্রিত স্বর্ণ সরবরাহের জন্য নির্দিষ্ট গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেন। তিনি যখন ঢাকার কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় পৌঁছান, তখন একদল দুষ্কৃতকারী তার পথরোধ করে।

 

ছিনতাইকারীরা রাজীব দাসকে মারধর করে এবং তার হাতে থাকা ব্যাগ থেকে এক কেজি স্বর্ণ ছিনিয়ে নেয়। এই হামলায় তিনি আহত হন এবং পরে থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন।

 

পরদিন ২৮ নভেম্বর ২০২৪, রাজীব দাস কোতয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু প্রথমে মামলাটির তদন্তে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। পরে ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, মামলাটি ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

তদন্ত ও অভিযান :

ডিবির একটি বিশেষ টিম ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করতে প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ শুরু করে।

 

২৯ ও ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, টানা দুই দিন ধরে পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলা এবং রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়।

 

প্রথমে পটুয়াখালী জেলার বাউফলে অভিযান চালিয়ে ছিনতাইকারী চক্রের মূল হোতা বিধান চন্দ্র বিশ্বাসকে ৫৮০ গ্রাম লুণ্ঠিত স্বর্ণসহ গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরও পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় আরও ৩৪৮ গ্রাম স্বর্ণ।

 

গ্রেফতারকৃতরা কারা? : 

পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃতরা সংঘবদ্ধ চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা হলেন—

 

# বিধান চন্দ্র বিশ্বাস – চক্রের মূল হোতা।

# সবুজ হাওলাদার – ছিনতাই পরিকল্পনার অন্যতম ব্যক্তি।

# আল আমিন খান – স্বর্ণ বহনের দায়িত্বে ছিল।

# তরিকুল ইসলাম – ছিনতাই কার্যক্রমে সরাসরি অংশ নেয়।

# শফিকুল রহমান চুন্নু – ছিনতাইয়ের সময় পাহারার দায়িত্বে ছিল।

# আজিম উদ্দিন – স্বর্ণ বিক্রির জন্য ক্রেতার সন্ধান করছিল।

 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছে যে, কালিপদ নামে এক ব্যক্তি তাদেরকে স্বর্ণ পরিবহনের তথ্য দিয়েছিল। এই তথ্য পেয়েই তারা ঘটনাস্থলে ওত পেতে ছিল এবং সুযোগ বুঝে রাজীব দাসের ওপর হামলা চালায়।

 

 

পুলিশ কী বলছে? :

 

ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন,

“এটি একটি সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র, যারা স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের ওপর নজর রাখত এবং সুযোগ বুঝে আক্রমণ করত। আমরা তদন্তের মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। এখন মামলার পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

 

তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত ছিনতাই হওয়া এক কেজি স্বর্ণের মধ্যে ৯২৮ গ্রাম উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি স্বর্ণ কোথায় আছে, তা জানতে আরও তদন্ত চলছে।

 

 

পরবর্তী পদক্ষেপ :

 

মামলার পরবর্তী তদন্ত চলমান।

চক্রের পলাতক সদস্যদের ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

কালিপদসহ অন্য সহযোগীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

 

পুলিশ আশা করছে, পুরো চক্র ধরা পড়লে রাজধানীতে স্বর্ণ ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ কমবে।