সদরপুরে ঐতিহ্যবাহী “বাইশরশি শিব সুন্দরী একাডেমী”তে ১১১ তম বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠিত।

প্রকাশিত: ৫:৪৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৯, ২০২৫

সদরপুর (ফরিদপুর) প্রতিনিধিঃ 

ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন স্হপতি “বাইশরশি শিব সুন্দরী একাডেমী”র ১১১তম বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠান বিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরে আজ ২৯ জানুয়ারী ২০২৫ সকাল ৯ টায় উদ্ভোধন করা হয়েছে।

অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও সদস্য সচিব আবদুল বারেক মিয়ার সভাপতিত্বে ও সিনিয়র ইন্সট্রাক্টর মোঃ মাসুদ আলমের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সদরপুর উপজেলার দক্ষ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকিয়া ইসলাম।

বিশেষ অতিথির আসন অলংকৃত করেছেন মোঃ মোফাজ্জেল হোসেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সদরপুর।

অতিথিদের আসন গ্রহণ, পতাকা উত্তোলন ও উদ্ভোধনী ভাষনের মাধ্যমে সকাল থেকে আকর্ষণীয় ইভেন্টে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ শুরু হয়।

আকর্ষণীয় পর্বটি শুরু হয় যেমন খুশি সাজো ও অতিথিদের ভাগ্য পরীক্ষা নামক ইভেন্টে।

শিক্ষক,শিক্ষার্থী, অতিথি, অভিভাবক ও গন মাধ্যমে কর্মীদের মিলন মেলায় একটা উৎসব মুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছিলো।

সব শেষে বিজয়ীদের পুরষ্কার বিতরন করা হয়।

১৯১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টির ইতিহাস এক বিচিত্র বর্ণের সপ্নীল ইতিহাস। ব্রিটিশ আমল, পাকিস্থান আমল আর স্বাধীন বাংলাদেশ এই তিন আমলের স্বাক্ষী বাইশরশি শিবসুন্দরী একাডেমী। বর্তমানে দেশের বিদ্যালয় সমূহের মধ্যে এ একাডেমী এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। এ বিদ্যানিকেতনটি মাতৃজঠর থেকে আলোর মুখ দেখেছিল সেই বৃটিশ শাসনামলে। কালের বিচিত্র অভিজ্ঞতার বিদ্যানিকেতনটি পরিণত হয়েছে এক প্রতিষ্ঠিত বিদ্যাঙ্গনে। এ শতাব্দী জীবন কালে সে তৈরী করেছে দেশবরণ্যে বহু মেধাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব।

বাইশরশি ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার অন্তর্গত সদরপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী একটি গ্রাম। এটি ভাঙ্গা এবং সদরপুর থানার সীমান্তবর্র্তী মিলন স্থলে অবস্থিত। এর পশ্চিমে স্রোতস্মিনী কাটাখালীর খাল প্রবাহিত। দক্ষিণে নুরল্যাগঞ্জ ইউনিয়ন। উত্তরে ডাক্তার বাজার এবং পূর্বে একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা জমিদার বাবুর বাড়ী ও বিশ্ব জাকের মঞ্জিল। ভৌগলিক দিক থেকে তৎকালীন এর অবস্থান এক দুর্গম ও অনুন্নত এলাকায়, এমনি একটি স্থানে প্রথম পর্যায়ে যারা উন্নয়নের গোড়া পত্তন করেন, তারা হচ্ছেন এ বাইশরশি বাবুর বাড়ির জমিদারগণ। পরবর্তীতে যারা নিরলস পরিশ্রম ও আর্থিক সহযোগীতা দিয়ে এর উন্নয়নে বিশেষ অবদান রেখেছেন তাঁদের শ্রদ্ধারত চিত্তে স্মরণ করতে হইল।

আজকের বাইশরশি শিবসুন্দরী একাডেমীর জন্ম ১৯১৪ সনে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তোর পর বর্তমান সরকারী রাজেন্দ্র কলেজের প্রতিষ্ঠাতা জমিদার রাজেন্দ্রবাবুর পূর্বপুরুষেরা বাইশরশির জমিদার বৃটিশ সরকারের নিকট থেকে স্থায়ীভাবে নিয়ে নেয়। শিবসুন্দরী চৌধুরানী রাজেন্দ্রবাবুর জেঠাতভাই জমিদার মহীনচন্দ্র রায়ের স্ত্রী এবং বাহাদুর মাহেন্দ্র নারায়ন রায় চৌধুরীর মাতা। ফরিদপুরের তথা বাংলা ইতিহাস থেকে জানা যায় তৎকালে এতদাঞ্চলে প্রাথমিক বা মাধ্যমিক শিক্ষার কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। জমিদারগণ নিজের সন্তানদের এবং আমত্যবর্গের সন্তানদের শিক্ষার্জনের লক্ষ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। এলাকার ভুস্বামী, সামন্ত্মপ্রভু, আমত্যবর্গ ও পাইক পেয়াদার ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য তারা জমিদারকে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার অনুরোধ জানান। এছাড়াও বঙ্গভঙ্গরদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল বিজয়, বাংলার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক সুপ্ত রেঁনেসার হাওয়া লাগে। সে হাওয়া অজপাড়াগাঁয়ের এ বাইশরশি গ্রামেও লাগে। এমনি পটভূমিতে বিশ্বযুদ্ধের দামামা যখন সারা পৃথিবীতে বেজে উঠে ঠিক তখন ১৯১৪ সালে বিশিষ্ট বিদুৎসাহী ন্যায়পরায়ন জমিদার রায় বাহাদুর মহেন্দ্রনারায়ন রায় চৌধুরী তাঁর মাতা শিবসুন্দরী চৌধুরাণীর নামে বাইশরশি জমিদার বাড়ীর সন্নিকটে (পশ্চিম পার্শ্বে) ৮ (৭.৯৩) একর জমির উপর একটি বিদ্যালয় নির্মাণের চিন্তাভাবনা করেন।

অতঃপর স্কুল প্রতিষ্ঠার কাজ ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা দ্রত গতিতে এগোতে থাকে। সুযোগ্য তত্ত্বাবধায়ক কৈলাস চন্দ্র সাহার কর্মতৎপরতায় ও হিসাব রক্ষক রসিক লাল ভৌমিকের অক্লান্ত পরিশ্রমে বিদ্যানিকেতনটি ১৯১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় “শিবসুন্দরী একাডেমী” নামে।

বাইশরশি শিবসুন্দরী একাডেমীর প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন বাবু হরিপ্রসন্ন বি.এ. (অনার্স) বি.টি। এ বিদ্যালয়ে প্রথম ১৯১৬ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৭ জন। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৬ জনই কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়, তন্মধ্যে ২ জন প্রথম শ্রেণী ও ৪ জন দ্বিতীয় শ্রেণীতে পাশ করে। উক্ত পরীক্ষায় সচীন্দ্রমোহন গুহ প্রথম স্থান অধিকার করায় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীর তহবিল থেকে ৮ টাকা হারে বৃত্তি পেতেন এবং পরবর্তীতে চাকুরীজীবনে তিনি কোলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন