আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম: আইনগত বাধা

প্রকাশিত: ১২:৫৮ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৯, ২০২৫

আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম: আইনগত বাধা

 

জাহিদ : 

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের বিস্তার দিন দিন বেড়ে চলেছে। এর মধ্যে রয়েছে দোকান, রেস্টুরেন্ট, ক্লিনিক ও অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তবে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করার ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা এবং বিধি-নিষেধের কারণে অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

 

আইনগত ভিত্তি :

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং সিটি করপোরেশনের নিয়ম অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করা অনুমোদিত নয়। বাংলাদেশ আইন অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করলে এটি বাড়ির পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এবং বাসিন্দাদের আরামদায়ক পরিবেশে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

 

বিভিন্ন সংস্থা ও কর্তৃপক্ষের বক্তব্য :

রাজউকের কর্মকর্তা জানান, “আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা আইন বিরোধী। এ ধরনের কার্যক্রমের জন্য আমাদের যথাযথ অনুমোদন প্রয়োজন। কেউ যদি আইন ভঙ্গ করে, তবে সে ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

 

সিটি করপোরেশনও একই মত পোষণ করেছে। তবে অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়ীরা উল্লিখিত নিয়ম ও বিধির তোয়াক্কা না করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

 

এমন পরিস্থিতির প্রভাব :

আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা বাড়ছে শহরের ট্রাফিক সমস্যা এবং পরিবেশ দূষণের কারণ হিসেবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি অনেক সময় বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মানকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

 

আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ :

রাজউক এবং সিটি করপোরেশন এ ধরনের আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা এবং জরিমানা আদায়ের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে তারা।

 

 

আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্পর্কিত আইনি ধারা :

 

বাংলাদেশে আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করার ক্ষেত্রে যেসব আইনি ধারা প্রযোজ্য, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ধারা হলো:

 

নগর পরিকল্পনা আইন, ২০০০ (ধারা ১৫): 

এই আইনের অধীনে শহরের উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন নেয়া বাধ্যতামূলক এবং এর পরিপন্থী কাজ হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

 

 

ঢাকা সিটি করপোরেশন আইন, ২০০০ (ধারা ১৩(৪)) : 

এই আইনের অধীনে ঢাকা শহরে আবাসিক এলাকায় কোনো বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য সিটি করপোরেশন থেকে অনুমোদন নেওয়া প্রয়োজন। অনুমোদন ছাড়া পরিচালিত বাণিজ্যিক কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

 

 

রাজউক (ঢাকা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) আইন, ১৯৯৩ (ধারা ৩৫) :

রাজউক আইন অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশেষ বিধি নিষেধ রয়েছে। এই আইনের আওতায়, আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করার আগে রাজউক কর্তৃক অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক। না হলে আইনগতভাবে কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।

 

 

নিরাপদ সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ (ধারা ১২) :

এই আইন অনুযায়ী, যদি আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রমের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বা ট্রাফিক সমস্যার সৃষ্টি হয়, তাহলে তা বেআইনি হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ধরনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে এবং জরিমানা আরোপ করা হতে পারে।

 

 

বাংলাদেশ সিভিল কোড, ১৮৬০ (ধারা ১৩৭) :

এই ধারা অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার কারণে আশেপাশের বাসিন্দাদের ক্ষতি হলে, তারা ক্ষতিপূরণের জন্য আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে। এক্ষেত্রে, দোষী পক্ষের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হতে পারে।

 

 

এভাবে, এসব আইনি ধারা আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের পরিচালনা সীমাবদ্ধ করে, এবং সঠিক অনুমোদন ছাড়া এমন কার্যক্রম পরিচালিত হলে তা আইনি শাস্তির মুখে পড়তে পারে।