ফুলবাড়ীতে প্রশাসনের বন্ধ করা ইটভাটা আবার চালু: পরিবেশ ও শিক্ষার ওপর প্রভাব। দৈনিক চৌকস দৈনিক চৌকস প্রকাশিত: ১২:৪৫ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৯, ২০২৫ জাহিদ খান,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের নওদাবশ এলাকায় সাইফুর রহমান সরকারি কলেজের পাশে অবস্থিত মেসার্স আলতাফ ব্রিকস নামক একটি অবৈধ ইটভাটা প্রশাসনের নির্দেশে বন্ধ হওয়ার পরও পুনরায় চালু হয়েছে। ১৬ জানুয়ারি প্রশাসন এই ইটভাটাটি বন্ধ করলেও, পরদিন রাতেই সেটি কার্যক্রম শুরু করেছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এলাকাবাসী জানিয়েছে, ইটভাটাটি রাতের আঁধারে চালু করায় প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে। এই ইটভাটার ধোঁয়া ও দূষণের কারণে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পাশাপাশি, দূষণ স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়াচ্ছে। ফুলবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রমে জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এ ধরনের ইটভাটা পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য এবং শিক্ষার পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। সরেজমিন পরিদর্শনে জানা গেছে, কাশিপুর ইউনিয়নের ফুলবাড়ী-নাগেশ্বরী মহাসড়কের পাশে একাধিক ইটভাটা রয়েছে। মাত্র আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ডব্লিউ এএইচ ব্রিকস, এবি ব্রিকস এবং এমএসএইচ ব্রিকস নামক তিনটি ইটভাটা পরিচালিত হচ্ছে। এসব ইটভাটার কাছাকাছি সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে গঙ্গারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গঙ্গারহাট উচ্চ বিদ্যালয় এবং কাশিপুর ডিগ্রি কলেজ অন্যতম। অন্যদিকে উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের ফকির পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠেও একটি অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এক শিক্ষক বলেন, “এই ভাটার কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।” শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ইটভাটার ধোঁয়া ও ধুলাবালির কারণে তাদের শ্বাসকষ্ট, চোখের সমস্যা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিচ্ছে। শিক্ষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতি শিক্ষার পরিবেশকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। ২০১৯ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থেকে এক কিলোমিটার দূরে ইটভাটা স্থাপন বাধ্যতামূলক। তবে আইন অমান্য করে ফুলবাড়ীর বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেহেনুমা তারান্নুম বলেন, “ইটভাটাটি পুনরায় চালু করার বিষয়ে আমি অবগত নই। তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পরিবেশ অধিদপ্তরের কুড়িগ্রাম জেলার সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম জানান, “আমরা ইটভাটাটি বন্ধ করেছিলাম। এটি পুনরায় চালু হলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের যৌথ অভিযানে চারটি অবৈধ ইটভাটার মালিকদের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, এ ধরনের অভিযান নিয়মিত চলবে। এলাকাবাসী এবং শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের কাছে দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, সাময়িক অভিযানের বদলে নিয়মিত অভিযান এবং কঠোর আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। পরিবেশ সুরক্ষা, জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং শিক্ষার পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা প্রয়োজন। অন্যথায়, এই সমস্যার প্রভাব আগামী প্রজন্মের জন্য ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। SHARES অপরাধ বিষয়: