
চাঁদপুর প্রতিনিধি
।চাঁদপুরের সাধারণ মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি ইচলী ফেরিঘাটে একটি ব্রিজ নির্মাণের। কারণ এতে এলাকার যাতায়াত সহজ হবে এবং শহরের প্রধান সড়কের যানজট কমবে। এই ব্রিজটি তৈরি হলে ইচলী, ঢালীরঘাট, বালিয়া, বাগাদী ও আশপাশের হাজার হাজার মানুষের, বিশেষ করে রোগী, শিক্ষার্থী এবং কর্মজীবী মানুষের শহরে যাতায়াতের দুর্ভোগ কমবে। অবশেষে চাঁদপুর ইচলী ২৬০ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণে ত্বরান্বিত হচ্ছে। এতে করে স্থানীয় অর্থনীতিতে আসবে নতুন গতি, উন্নত হবে নতুন যোগাযোগের স্বপ্নের যাত্রা। গত মঙ্গবাল (২৮ অক্টোবর ২০২৫ সেতু নির্মাণে স্থান পরিদর্শন করেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন, চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড:সলিম উল্লাহ সেলিমসহ চাঁদপুর সড়ক বিভাগের কর্মকর্তাগন। চাঁদপুর-নানুপুর-চান্দ্রা-কামতা বাজার রামগঞ্জ সড়ক (জেড-১৪১২)-এর চেইমেজ ০+৭৯৫০-এ ডাকাতিয়া নদীর উপর ২৬০ মিটার দীর্ঘ পি.সি গার্ডার সেতু নির্মাণ। বর্তমানে বিআরটিসি-বিইউইটি এর হাইড্রোলজিকাল স্টাডি সম্পন্ন করা হয়েছে। এতে হাজারো যাত্রী ও ব্যবসায়ীর জন্য নতুন দরজা খুলছে। স্টাডি ও ডিজাইনে ইটউঞ-এর হাইডতেরা-মরফোলজিকাল সার্ভে (১২/০৮/২০২২), ঐউঈ-জঅঝ মডেলিং; ইওডঞঅ-এর ক্লাস ক্লিয়ারেন্স (ভার্টিক্যাল ১২.২০ মিটার, হরাইজন্টাল ৭৬.২২ মিটার) প্রক্রিয়ায়। চ্যালেঞ্জ ও সমাধান করা হয়েছে বৈদ্যুতিক লাইন (চাঁদপুর পাওয়ার জেনারেশন, দেশ এনার্জি, ইচউই) ক্লিয়ারেন্স নেওয়া হয়েছে, নদী সুরক্ষার জন্য তীর প্রশিক্ষণ কাজ। পূর্বের চাঁদপুর (সতু (২৫৪ মিটার, ৬-স্প্যান) ও নতুন বাজার-পুরান বাজার সেতু (২৬০ মিটার) থেকে শিক্ষা নিয়ে ডিজাইন। প্রসঙ্গত, চাঁদপুরের মানুষের স্মৃতি আর জেলার শতবর্ষী ঐতিহ্যের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে থাকা এক নাম, ইচলী ফেরিঘাট। দেশের বৃহত্তম নদীবন্দর সদরঘাটের সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল এই ঘাট। সময়ের বিবর্তন আর অবকাঠামোগত পরিবর্তনের ফলে সেই এক সময়ের কোলাহলমুখর ইচলী ফেরিঘাট আজ প্রায় নিস্তব্ধ, বিলীন। একসময় রামগঞ্জ, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীসহ দক্ষিন পূর্বাঞ্চলের আশপাশের কয়েক জেলার হাজার হাজার মানুষ এই ঘাট দিয়েই লঞ্চে চড়ে ঢাকায় যেত। সদরঘাট থেকে ফিরে এসেও পা রাখতো এই ঘাটে। দিনরাত চলত মানুষের ভিড়, লঞ্চের হুইসেল, নৌকার মাঝিদের ডাকাডাকি আর টোলের ব্যস্ততা।
এই ফেরিঘাটের বুকেই গড়ে উঠেছিল অসংখ্য মানুষের জীবিকার উৎস, খেয়া নৌকা, দোকান, খাবারের হোটেল আর টোল আদায়ের ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে এ ঘাট ছিল এক জীবন্ত নদীজীবন ও ব্যবসার কেন্দ্র। ২০০৫ সালে চাঁদপুর-রায়পুর সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই কমতে থাকে ফেরিঘাটের কোলাহল, মানুষের সমাগম। বন্ধ হয়ে যায় ফেরি চলাচল। তবু লঞ্চঘাটের কারণে তখনো টিকে ছিলমানুষের যাতায়াত, আশপাশের মানুষ তখনো সংক্ষিপ্ত নদীপথে শহরে যেত-আসত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লঞ্চ চলাচলও কমে আসে, এখন আর কোনো লঞ্চ ইচলী ঘাটে ভিড়ে না। ফলে ইচলী ফেরিঘাট হারিয়েছে তার মূল প্রাণশক্তি, আর হয়ে গেছে প্রায় জনশূন্য এক স্থান। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এক সময় যেখানে প্রতিদিন শত শত মানুষের ভিড়, যানবাহনের দীর্ঘ লাইন আর লঞ্চের হুইসেলে সমাগম ছিলো ইচলী ফেরিঘাট, সেই জায়গায় এখন নেমে এসেছে শুধুই নিরবতা। খেয়া নৌকার সংখ্যা কমে এখন দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭/৮ টিতে। তাও দিনে হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ এ নৌকা পারাপার করে থাকে। এখন কেবল বাগাদী, চৌরাস্তা, ইচলী, ঢালীর ঘাট ও আশপাশের গ্রামের কিছু মানুষ এ ঘাট ব্যবহার করেন, তাও খুবই সীমিত আকারে।
ইচলী ফেরিঘাটটিতে ব্রিজ নির্মাণ হলে চাঁদপুরের ইচলী, ঢালীরঘাট, বালিয়া, বাগীদী, বাগড়া বাজার সহ দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের হাজারো মানুষের যাতায়াত অনেকটা সহজ হয়ে যেত। বিশেষ করে রোগী, শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষের শহরে যাতায়াতের ভোগান্তি কমত। এ ছাড়া শহরের প্রধান সড়কের যানজটও অনেকটা হ্রাস পেত।
ইচলী ফেরিঘাটটিতে ব্রিজ নির্মাণ হলে চাঁদপুরের ইচলী, ঢালীরঘাট, বালিয়া, বাগীদী, বাগড়া বাজার সহ দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের হাজারো মানুষের যাতায়াত অনেকটা সহজ হয়ে যেত। বিশেষ করে রোগী, শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষের শহরে যাতায়াতের ভোগান্তি কমত। এ ছাড়া শহরের প্রধান সড়কের যানজটও অনেকটা হ্রাস পেত।
চিকিৎসা, শিক্ষা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ যেমন প্রসারিত হতো, তেমনি এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা হতো আরও গতিময় ও স্বাচ্ছন্দ্যময়। স্থানীয়দের মতে, দীর্ঘদিনের এই দাবি বাস্তবায়ন হলে পুরো এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসত এক ভিন্ন পরিবর্তন। ছাত্রদল নেতা বারেক ভূঁইয়া বলেন, এই ঘাট শুধু এক টুকরো জমি নয়, এটি চাঁদপুরের ইতিহাসের অংশ, মানুষের স্মৃতি আর জীবনের সাথে জড়িত এক গল্প। যদি অন্তত ইচলী লঞ্চঘাটটি আবারো চালু করা যেত, এখানে মানুষ আসত, দোকানগুলো বাঁচত, মাঝিদের সংসারে হাসি ফিরত।
|
|