জোটে ভাগাভাগি আর অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ৬৩ আসনে মনোনয়ন বাকি বিএনপির

News News

Admin

প্রকাশিত: ১২:৩৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১২, ২০২৫

সাজ্জাদ হোসেন

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আসন্ন নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ৬৩টিতে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। একদিকে মিত্র দলগুলোর সঙ্গে আসন ভাগাভাগির প্রতিশ্রুতি, অন্যদিকে দলীয় একাধিক শক্তিশালী প্রার্থীদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের আশঙ্কায় এখন পর্যন্ত সেগুলো ফাঁকাই রয়েছে। গত ৩ নভেম্বর ২৩৭ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম প্রকাশ করলেও দলটি অন্তত ৩০টি আসন খালি রেখেছে মিত্র দলগুলোর জন্য এবং বাকি ৩৩টি দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের জটিলতার কারণে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘আমরা মিত্র দলগুলোর সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা করেছি এবং শিগগির বাকি আসনগুলোর প্রার্থী চূড়ান্ত করব। এখন তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকার জন্য অপেক্ষা করছি।’ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল এক ফেসবুক পোস্টে দলীয় নেতাকর্মীদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে আশ্বাস দিয়েছেন, যারা মনোনয়ন পাননি, তাদেরও যথাযথ দায়িত্ব ও সম্মান দেওয়া হবে। নীলফামারী-১ আসনটি এখনো খালি রয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাতিজা শাহরিন ইসলাম তুহিন ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মনজুরুল ইসলাম আফেন্দি দুজনেই এই আসনে মনোনয়ন চাইছেন। ফলে কাকে এই আসনের জন্য বেছে নেওয়া হবে তা নির্ধারণে জটিলতার মধ্যে রয়েছে বিএনপি।দলীয় সূত্র জানিয়েছে, মিত্রদের সঙ্গে আরও আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বগুড়া-২ আসনে নাগরিক ঐক্য থেকে মাহমুদুর রহমান মান্না নির্বাচন করতে চাইছেন। ফলে বিএনপি সেখানে নিজস্ব প্রার্থী দেয়নি। পটুয়াখালী-৩ আসনেও বিএনপি প্রার্থী দেয়নি গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরর জন্য।একইভাবে ঝিনাইদহ-২ ও ৪ আসনেও বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেনি। গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান ও জেলা বিএনপি সভাপতি দুজনেই ঝিনাইদহ-২ আসনে প্রার্থী হতে চান। যার ফলে এই আসন নিয়ে সিদ্ধান্ত স্থগিত রয়েছে। বিএনপি সূত্র জানায়, জেলা বিএনপি সভাপতিকে ঝিনাইদহ-৪ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। পিরোজপুর-১ আসনটি রাখা হয়েছে ১২ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের জন্য। একই অবস্থা কিশোরগঞ্জ-৫ আসনেও। জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এইসানুল হুদা সেখান থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান।ঢাকা-১৩ আসনটি রাখা হয়েছে বিএনপির সহযোগী দল ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের জন্য। ঢাকা-১৭ আসনেও বিএনপি প্রার্থী দেয়নি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থর জন্য। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা ও উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতা জুনায়েদ আল হাবিব প্রার্থী হতে চাওয়ায় সেখানে মনোনয়ন স্থগিত রয়েছে এখন পর্যন্ত। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে গণসংগতি আন্দোলন তাদের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকিকে মনোনীত করেছে। আর কুমিল্লা-৭ আসনে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি প্রার্থী করতে চায় তাদের মহাসচিব রেদওয়ান আহমেদকে। এ ছাড়াও জোটের অংশীদারদের জন্য বিএনপি খালি রেখেছে হবিগঞ্জ-১, সুনামগঞ্জ-২, সুনামগঞ্জ-৪, সিলেট-৪, সিলেট-৫, লক্ষ্মীপুর-১, লক্ষ্মীপুর-৪, ঢাকা-৭, ঢাকা-৯, ঢাকা-১০, ঢাকা-১৮, ঢাকা-২০, নারায়ণগঞ্জ-৪, চট্টগ্রাম-১৪, চট্টগ্রাম-১৫, নড়াইল-২, যশোর-৫ ও ঝালকাঠি-১।বাগেরহাটের তিনটি আসনে কোনো প্রার্থীই ঘোষণা করা হয়নি। নির্বাচন কমিশনের নতুন সীমানা নির্ধারণে একটি আসন কমে যাওয়ার পর বিএনপি সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খাচ্ছে যে কাকে প্রার্থী করবে আর কাকে বাদ দেবে। এদিকে, বিএনপি গতরাতে মাদারীপুর-১ আসনে ঘোষিত প্রার্থী কামাল জামান মোল্লার মনোনয়ন বাতিল করেছে।অভ্যন্তরীণ কোন্দলের আশঙ্কা ৬৩টি খালি আসনের মধ্যে ৩০টিতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা স্থগিত রেখেছে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের আশঙ্কায়। সেখানে একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছে। ঠাকুরগাঁও-২ আসনে মির্জা ফখরুল ইসলামের ছোট ভাই মির্জা ফয়সাল আমিন ও ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক মহাসচিব আব্দুস সালাম প্রার্থী হতে চান। তাদের মধ্যে কাকে বেছে নেওয়া হবে সেই সিদ্ধান্ত এখনো নিতে পারেনি বিএনপি। একইভাবে, প্রার্থী ঘোষণা দিলে দলে অন্তর্কোন্দল দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে দিনাজপুর-৫, নীলফামারী-৩, লালমনিরহাট-২, নওগাঁ-৫, নাটোর-৩, সিরাজগঞ্জ-১, পাবনা-১, ঝিনাইদহ-১, খুলনা-১, পটুয়াখালী-২, টাঙ্গাইল-৫, ময়মনসিংহ-১০, কিশোরগঞ্জ-১, মানিকগঞ্জ-১, মুন্সিগঞ্জ-৩, গাজীপুর-১, গাজীপুর-৬, নরসিংদী-৩, রাজবাড়ী-২, মাদারীপুর-২, কুমিল্লা-২, ময়মনসিংহ-৪, বরিশাল-৩, চট্টগ্রাম-৩, চট্টগ্রাম-৬, চট্টগ্রাম-৯, চট্টগ্রাম-১১ এবং কক্সবাজার-২ আসনে। সেখানে একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী মনোনয়নের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বগুড়ায় উল্লাসের জোয়ার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বগুড়া-৭ ও বগুড়া-৬ আসনে প্রার্থী করায় বগুড়া জুড়ে আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। এই ঘোষণা দেওয়ার পর দুটি আসনেই বিএনপি নেতাকর্মীরা আনন্দ মিছিল করেছেন। গাবতলীর মহিষাবান গ্রামের আসবাব ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘খালেদা জিয়া আবারও আমাদের এলাকা থেকে প্রার্থী হচ্ছেন। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হবেন এবং বগুড়ার উন্নয়নে আবার কাজ করতে পারবেন।’ কদমতলীর মুদি দোকানদার আসমা বেগম বলেন, ‘অনেক দিন পর আমরা ভোট দিতে পারব। খালেদা জিয়া আবার আমাদের এলাকা থেকে প্রার্থী হচ্ছেন, এতে আমরা খুশি।’ গাবতলী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক নোটন বলেন, ‘নেতাকর্মী ও জনগণ—সবাই আনন্দে ভাসছে। আমরা বিপুল ভোটে ম্যাডাম জিয়ার বিজয় নিশ্চিত করব।’ বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, ‘বগুড়ার প্রিয় সন্তান তারেক রহমান তরুণদের আশা ও ভবিষ্যতের প্রতীক। জনগণ খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দুজনকেই বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবেন।