রাজশাহী পুঠিয়ায় কলা চাষে বাম্পার ফলন: বানেশ্বর হাটে জমজমাট ব্যবসা

News News

Admin

প্রকাশিত: ১২:৫৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১১, ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা, যা উত্তরবঙ্গের সুমিষ্ট আমের জন্য বিখ্যাত, এখন কলা চাষের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এ বছর কৃষকদের মধ্যে কলা চাষের প্রতি ব্যাপক আগ্রহ জাগ্রত হয়েছে, যা স্বল্প পরিশ্রমে উচ্চ ফলন এবং লাভের প্রতিশ্রুতিতে অনুপ্রাণিত। শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাই এখন এই কৃষি পেশায় ব্যস্ত। পুঠিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামে ঘুরে দেখা যায়, চাপা কলা, অনুপম, সাগর, জ্বীন, আনাজীসহ বিভিন্ন জাতের কলা বাগানে লাগানো হয়েছে। ফলে বানেশ্বর কলাহাট জমজমাট হয়ে উঠেছে, যা স্থানীয় অর্থনীতির চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বানেশ্বর ইউনিয়নের বালিয়াঘাটি গ্রামের সহকারী অধ্যাপক নুরুল হুদা এ বছর তার ৭ বিঘা জমিতে রঙিন সাগর কলা চাষ করেন। পাইকাররা জমি থেকে সরাসরি কলা কেটে নিয়ে গেছে, এবং তিনি প্রায় ১৪ লক্ষ টাকার দাম পেয়েছেন। “কলা চাষে আমি পুরোপুরি সন্তুষ্ট,” তিনি বলেন। একই ইউনিয়নের পরিষদ সদস্য আলমগীর হোসেন তার ৩ বিঘা জমিতে রঙিন সাগর কলা থেকে ৫ লক্ষ টাকা আয় করেছেন। বিরালদহ হাতিনাজা গ্রামের যুবক ইউসুফ আলী বেকারত্বের দিন শেষ করে অন্যের ৭ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ৫ বিঘায় সাগর কলা চাষ করেছেন। এখন তিনি স্বাবলম্বী। “কলা চাষ আমার জীবন বদলে দিয়েছে,” ইউসুফ আলী  বলেন, এক বিঘা চাষে নিজের জমিতে খরচ ৩৫-৫০ হাজার টাকা, লিজে ৮০ হাজার টাকা। উৎপাদন থেকে লাভ ৮০ হাজার থেকে ১.১০ লক্ষ টাকা। “অন্য ফসলে লেবার খরচ ও শারীরিক পরিশ্রম বেশি, কলায় সুবিধা অনেক,” তিনি যোগ করেন। যেকোনো ধরনের সার প্রয়োগ করে মানসম্মত চাষ সম্ভব হওয়ায় এটি সকলের জন্য আকর্ষণীয়। পুঠিয়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা স্মৃতি রানী দাস জানান, এ বছর ৮০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের কলা চাষ হয়েছে। উপ-সহকারী কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ভালো ফলন এবং দামের কারণে কৃষকরা খুশি। বাজারে চাহিদা বাড়ায় আমদানিও বেড়েছে। বানেশ্বর হাটের পাইকারি ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন বলেন, “গত বছরের চেয়ে কলা বিক্রি বেড়েছে, লাভও ভালো।” পুঠিয়ায় দুটি বড় কলাহাট—বানেশ্বর ও ঝলমলিয়া—আম-কলার জন্য বিখ্যাত। এখান থেকে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ফলমূল পাঠানো হয়। হাটের ইজারাদার জাক্কার ও শরিফুল জানান, সপ্তাহে ৪ দিন বেচাকেনা চলে, প্রায় ৪৫-৫০ হাজার কাঁঠি কলার লেনদেন হয়। পাইকাররা বিভিন্ন এলাকা থেকে কিনছেন। এই হাটগুলো কৃষি ও স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কলা চাষের এই সাফল্য পুঠিয়ার কৃষকের বেকারত্ব কমে স্বাবলম্বিতা বাড়ছে, এবং অঞ্চলের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হচ্ছে। সরকারি সহায়তা অব্যাহত থাকলে এই প্রবণতা আরও বাড়বে।