নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রামে হেযবুত তওহীদের কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (৮ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম জামালখান প্রেসক্লাবের জুলাই স্মৃতি হলে এই আয়োজন করা হয়।
মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিভাগের সহ-সম্পাদক রাকিব আল হাসান। বক্তব্যে আন্তর্জাতিক ও বাংলাদেশের বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সুদানে আজ গণহত্যা চলছে, ফিলিস্তিনে নির্বিচারে নারী-শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। মিয়ানমারের মুসলমানদের নিজেদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। সারা বিশ্বে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১২ কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষ। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে  তিনি বলেন, শান্তির আশায় আমরা সরকার পরিবর্তন করছি কিন্তু সমস্যা আমাদের জীবনব্যবস্থায়। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুলাইতে শান্তির আশায় স্বৈরাচারের পতন ঘটানো হলো। তবে সেই কাঙ্ক্ষিত শান্তি আসেনি। পরিসংখ্যান বলছে গত নয় মাসে দুই হাজার ৯১১ জন খুন হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত দেশ জুড়ে অন্তত ৩০১ নারী-পুরুষ ও শিশুর মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। এদের মধ্যে ২০৯ জনের পরিচয় জানা গেছে, বাকি ৯২ জন এখনো ‘অজ্ঞাত পরিচয়’। গত বছর নদী থেকে অন্তত ৪৪০টি মরদেহ উদ্ধার হয়েছিল, যার মধ্যে ১৪১ জনের পরিচয় এখনো শনাক্ত হয়নি। এই হচ্ছে দেশের বর্তমান চিত্র। শান্তির জন্য গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেলো কিন্তু শান্তি আসে নাই। আসন্ন ফেব্রয়ারী মাসে দেশে নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা শান্তির আশা করছি। এ যেন মাকাল ফলের গাছ লাগিয়ে আম খাওয়ার আশা করার মত অসম্ভব কল্পনা করছি। আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ ও শান্তির একমাত্র পথ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ব্রিটিশদের দেওয়া মানব রচিত গণতান্ত্রিক জীবনব্যবস্থা অন্ধ ভাবে অনুকরণ করছি। এই ত্রুটিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা দিয়ে কখনই শান্তি আসবে না। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহর দেওয়া নির্ভূল জীবনব্যবস্থার বিকল্প নেই। কোরআনকে মৌলিক ভিত্তি ধরে হেযবুত তওহীদের ইমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম তওহীদ ভিত্তিক আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা নামক একটি বই লিখেছেন। সেই বইতে জাতির সামনে ইসলামের মাধ্যমে যাবতীয় সমস্যা সমাধানের পথ তুলে ধরা হয়েছে। মুখ্য আলোচক জনগণকে মাকালফল নামক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা বাদ দিয়ে আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহবান জানান। সংগঠনটির চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি নজরুল ইসলাম সবুজের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বিভাগীয় আমির মাহাবুব আলম। বক্তব্যে তিনি বলেন, বিট্রিশরা ২০০ বছর আমাদেরকে শাসন করেছে। তারা গণতন্ত্রের মাধ্যমে আমাদের শাসন করেনি। তবে চলে যাওয়ার আগে আমাদের ওপরে বিভক্তির গণতন্ত্র চাপিয়ে দিয়ে গিয়েছে। গণতন্ত্রের নামে হানাহানি করতে করতে আজকে দেশ অগ্নিগর্ভে পরিণত হয়েছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ রয়েছে হেযবুত তওহীদের কাছে।  বিপ্লবের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে তিনি চট্টগ্রামে হেযবুত তওহীদের ১৩টি ইউনিটের সকল সদস্যদের জেলার সর্বস্তরের মানুষের কাছে এই মুক্তির পথ তুলে ধরতে আহবান জানান। কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের গণমাধ্যম ও যোগাযোগ সম্পাদক শারমিন সুলতানা চৈতি। তিনি বলেন, দেশ আজ এমন পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছে যে একজন মা তার গর্ভের সন্তানকে চিরকুট লিখে ফেলে দিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য, মানবজাতির মুক্তির জন্য চট্টগ্রামে সকল নারী-পুরুষ সদস্যদের মাঠে থেকে কাজ করতে উজ্জীবিত করেন।
বিশেষ অতিথিদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক আমির মোঃ সেলিম হোসেন,  চট্টগ্রাম বিভাগীয় নারী সম্পাদক জোবাইদা আক্তার বেবি, চট্টগ্রামের জেলা সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রোহান, জেলা নারী সম্পাদক আমতুল্লাহ বিনতে নজরুল প্রমুখ। জোরারগঞ্জ থানা আমির এম জসিম উদ্দিন ভুঁইয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, আনোয়ারা থানা আমির মোঃ দেলোয়ার হোসেন, ইপিজেড থানা আমির মোঃ ফারুক হোসেন, পতেঙ্গা থানা আমির মোঃ রিয়াজ খান, কোতোয়ালি থানা আমির মোঃ বেল্লাল হোসেন, মিরসরাই থানা আমির মোঃ মহিবুল্লাহ রহমান, সীতাকুণ্ড থানা আমির আকলিমা আক্তার, রাঙ্গামাটি থানা আমির হাবিবুর রহমান, পাহাড়তলী থানা আমির ইকবাল হোসেন, ডাবলমুরিং ও খুলশী থানা আমির মোঃ ফরহাদ হোসেন। কর্মী সম্মেলনে বক্তাদের বক্তব্য শেষে পরিচিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের সাথে সাধারণ সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে হেযবুত তওহীদের কয়েক হাজার সদস্য উপস্থিত ছিলেন।