
অ্যড. জাহিদ
ঢাকা ওয়াসাকে ঘিরে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে এখন তীব্র বিতর্ক চলছে।প্রশ্ন উঠছে—গণ-অভ্যুত্থানের পরও কেন এই প্রতিষ্ঠানটি এখনও একই দুর্নীতির সংস্কৃতিতে জর্জরিত? তথ্য বলছে, ওয়াসার শীর্ষ কর্মকর্তা সচিব মো. মশিউর রহমান খান এবং প্রধান প্রকৌশলী আব্দুস সালাম বেপারী-র নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে একটি দুর্নীতির সিন্ডিকেট, যারা প্রশাসনের সংস্কারের নামে নতুন এক “ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য” গড়ে তুলেছেন। নতুন সরকার, পুরনো কেলেঙ্কারি, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পরিবর্তনের পর মানুষ আশা করেছিল, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্নীতিমুক্ত হবে। কিন্তু বাস্তবতা যেন তার উল্টো ছবি। স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের আওতাধীন ঢাকা ওয়াসা—যে প্রতিষ্ঠানটি রাজধানীর কোটি মানুষের পানি সরবরাহের দায়িত্বে—সেটিই এখন অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দু। একজন সাবেক কর্মকর্তা বলেন, ওয়াসা এখন আর প্রশাসনিক নয়, বরং রাজনৈতিক সিন্ডিকেটের অর্থ উপার্জনের মেশিনে পরিণত হয়েছে।”অভিযোগের কেন্দ্র সূত্র জানায়, মো. মশিউর রহমান খান ও আব্দুস সালাম বেপারী—দুজনই আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সরকারি রদবদলের পরও তাঁরা নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছেন। অভিযোগ আছে, সচিব মশিউর ২ কোটি টাকার বিনিময়ে আব্দুস সালাম বেপারীকে প্রধান প্রকৌশলীর পদে নিয়োগ দেন। একজন কর্মকর্তা বলেন, দুর্নীতির বিভাগীয় মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও তাকে পদে রাখা হয়েছে শুধুমাত্র টাকার জোরে। বেপারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ঠিকাদার নিয়োগ, দরপত্র প্রক্রিয়া ও প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রকাশ্য হস্তক্ষেপ করেন। সূত্র বলছে, তিনি ওয়াসার বিভিন্ন প্রকল্পের ঠিকাদারদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন, আর অর্থ আদায়ের জন্য নিয়োগ দিয়েছেন ব্যক্তিগত সমন্বয়কারী আরিফ, যিনি ‘মেসার্স সাজেদা এন্টারপ্রাইজ’-এর মালিক। দরপত্রে ভাগ-বাটোয়ারা, বিদেশে ঘুষের টাকা আজিমপুর পিডব্লিউডি কলোনির পানির লাইন প্রকল্পের উদাহরণই যথেষ্ট। অভিযোগ উঠেছে, ১ কোটি ২৭ লাখ টাকার প্রকল্পটি পত্রিকায় বা সিপিটিইউ প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ না করে, সালাম বেপারী গোপনে চারটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভাগ করে দেন—মেসার্স দীপ্ত এন্টারপ্রাইজ, আলিফ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, শ্যামলী এন্টারপ্রাইজ এবং মীর ইঞ্জিনিয়ারিং। ওয়াসার এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দরপত্রের নিয়ম মানলে হয়তো দক্ষ প্রতিষ্ঠান কাজ পেত, কিন্তু এখন সবই টাকার খেলা। অভিযোগ আরও আছে—সালাম বেপারী নিম্নমানের মালামাল সরবরাহকারীদের প্রাধান্য দিচ্ছেন। আগে যেখানে ‘Best Value for Money’ নীতিতে উন্নত দেশ থেকে সরঞ্জাম আমদানি হতো, এখন ভারত ও চীনের নিম্নমানের পণ্য ঢুকছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ভবিষ্যতে রাজধানীর পানি সরবরাহ ব্যবস্থাকে ঝুঁকিতে ফেলবে।