
খুলনা অফিস
দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে সীমিত আকারে কার্যক্রম শুরু করলো খুলনার নতুন জেলা কারাগার—যা দেশের অন্যতম আধুনিক ও নিরাপত্তাসম্পন্ন কারাগার হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। শনিবার (১ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে প্রথম দফায় ১০০ জন সাজাপ্রাপ্ত বন্দিকে ‘প্রিজন সেল’-এর মাধ্যমে নতুন কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও বন্দিদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানায় কারা কর্তৃপক্ষ। উদ্বোধনী কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিভাগের ডিআইজি প্রিজন মো. মনির আহমেদ, খুলনা জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. নাসির উদ্দিন প্রধান, ডেপুটি জেল সুপার আব্দুল্লাহ হেল আল আমিন, জেলার মুহাম্মদ মুনীরসহ কারা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান বলেন,
“দীর্ঘ দিনের প্রতীক্ষা শেষ হলো আজকের স্থানান্তরের মধ্য দিয়ে। যেহেতু এটি নতুন অবকাঠামো, তাই শুরুতে কিছু বাস্তব চ্যালেঞ্জ থাকবে। তাই সীমিত সংখ্যক বন্দিকে এনে প্রাথমিকভাবে কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।”
আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন নতুন কারাগার ৩০ একর জমির ওপর নির্মিত এই কারাগার কমপ্লেক্সে রয়েছে মোট ৫৭টি স্থাপনা। বন্দিদের থাকার জন্য নির্মিত হয়েছে ১১টি পৃথক ভবন, যার প্রতিটির চারপাশে আলাদা সুরক্ষা প্রাচীর রয়েছে— যাতে বিভিন্ন শ্রেণির বন্দিরা পরস্পরের সংস্পর্শে না আসতে পারে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সুরক্ষা দেয়াল।
কারাগারে রয়েছে— আধুনিক হাসপাতাল,বৃহদাকার মসজিদ,প্রশাসনিক ভবন,পাকা সড়ক, ফুটপাত ও পার্কিং এলাকা পৃথক শ্রেণির বন্দিদের জন্য আলাদা ভবন ও ব্লক সবচেয়ে আলোচিত স্থাপনাটি হলো আধুনিক ফাঁসির মঞ্চ, যা কারা কর্তৃপক্ষের দাবি—এটি দেশের সবচেয়ে নিরাপদ ও আধুনিক মৃত্যুদণ্ড কার্যকরণ কেন্দ্র। কারাগারটির দক্ষিণ–পশ্চিমাংশে অবস্থিত এই মঞ্চটি সম্পূর্ণ কারিগরি ও নিরাপত্তা মান বজায় রেখে নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রকল্প ব্যয় ও সময়সীমা বৃদ্ধি ২০১১ সালে একনেক ১৪৪ কোটি টাকায় এই কারাগার নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন করে। পরে একাধিকবার সময়সীমা বাড়ানো এবং বাজেট সংশোধনের ফলে নির্মাণ ব্যয় গিয়ে দাঁড়ায় ২৮৮ কোটি টাকা। কারাগারের নকশায় ধারণক্ষমতা ৪ হাজার বন্দির হলেও, বর্তমান পরিকাঠামোয় আপাতত প্রায় ২ হাজার বন্দিকে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। নতুন কারাগার চালুর মাধ্যমে খুলনা নগরের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের চাপ কমবে বলে আশা করছে প্রশাসন।