
মুজিবুল হক চৌধুরী
বিশেষ প্রতিনিধি, ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম সমিতি -ঢাকা সমিতি দখল সংক্রান্ত নিয়ে ১২/১০/২৫ রবিবার দুপুর ১টায় ঢাকা রিপোর্টার ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন। দীর্ঘদিন ধরে কি কিছু লোক ঢাকার সেগুন বাগিচার তোপখানা রোডে অবস্থিত সমিতির ভবনে আতংক ও দাঙ্গা হাঙ্গামা সৃষ্টি করে জোর পূর্বক সমিতির অফিস দখল করে তালা লাগিয়ে দেয় বহিরাগত একটি বাহিনী। বহিরাগত দখলকারী বাহিনী চট্টগ্রাম সমিতি ভবনের নীচে সব সময় ১৫/২০ জন চেয়ার পেতে বসে থাকে, কেউ ভবনে ঢুকতে গেলে আটকিয়ে নানান প্রশ্ন করে বাধা প্রদান করছে। আর সমিতির সদস্যদের পেলে নানান অপমান অপদস্থ ও হুমকি দিয়ে বিদায় করছে।
ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম সমিতির অফিস তালাবদ্ধ, পরিচালনা পরিষদ, আজীবন সদস্য ও সাধারণ সদস্যদের সমিতির অফিসে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় সমিতির কার্যক্রম মূলতঃ থেমে গেছে। নষ্ট হতে চলেছে ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম সমিতি- ঢাকার সুনাম ও মিল বন্ধন। বহিরাগত বাহিনী দিনে সমিতি ভবনের নীচে পাহারায় ব্যস্ত থাকে আর রাতে সমিতির অফিসে ঘুমায়। এই অবৈধ কাজ ও হাস্যকর অবস্থা দেখে সমিতির সকল সদস্য বিস্মিত। সমিতির প্যাড, মানি রিসিট ব্যবহার করে বিভিন্ন অবৈধ বেআইনি কাজ এবং ভবনের ভাড়া, চাঁদা তুলে নিজেরা আত্মসাৎ ও ভাড়াটে বহিরাগত পাহারাদারদের পেছনে ব্যয় করছে।
বেআইনি ভাবে জোর পূর্বক সমিতির অফিস দখল ও তালাবদ্ধ করে দেওয়ায় বর্তমান পরিচালনা কমিটি, আজীবন সদস্য সহ সকল সদস্য অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন এই প্রতিবেদককে বলেন – সমিতির পরিচালনা পরিষদে কোন ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার থেকে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা সবাই মিলে অনাস্থা ও আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারতাম। এভাবে বহিরাগতদের দিয়ে অফিস দখল, তালাবদ্ধ ও পাহারা বসানো বেআইনি ও আমাদের সমিতির দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যকে নষ্ট করেছে, আমরা এর অবসান চাই, সমিতিকে কার্যকর চলমান চাই। এ ধরনের হীনমন্যতা ও ষড়যন্ত্র সমিতির কার্যক্রমকে থেমে দেওয়ার চক্রান্ত।
চট্টগ্রাম সমিতি -ঢাকা দখল ও তালাবদ্ধ করার ঘটনায় বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী জর্জ চতুর্থ আদালত, ঢাকায় মামলা করা হয়। উক্ত মামলার ইন্টেরিম আদেশ বিবাদী ও বহিরাগতরা অবমাননা করেছেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়রি করা হয়, তাতেও কোন আইনগত সহযোগিতা পাচ্ছে না সমিতির পরিচালনা কমিটি। বহিরাগত দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় সদস্যদের মধ্যে নানান প্রশ্ন ও ক্ষোভ দেখা গেছে।
সমিতির বর্তমান কার্যকরি কমিটির মেয়াদ আগামী ডিসেম্বর মাসে শেষ হয়ে যাবে। চট্টগ্রাম সমিতি -ঢাকার সংবিধান ও আইন অনুযায়ী কার্যকরি কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩ মাস পূর্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করে পরবর্তী কার্যকরি কমিটি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়। সেই মোতাবেক নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। সমিতির অফিস তালাবদ্ধ, ভবনের প্রধান ফটকে বহিরাগতদের অবৈধ পাহারা ও প্রবেশে বাধা প্রদান করায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য সদস্যরা ভবন ও অফিসে প্রবেশ করতে পারছেন না। অনেকেই গেলে তাদের অপমান অপদস্থ করে হেনস্থা করা হচ্ছে। সমিতির সকল দলিলপত্র অফিসে রয়েছে, সেগুলো ছাড়া কাজ শুরু করা অসম্ভব। সঠিক সময়ে নির্বাচন আয়োজন ও সম্পন্ন করতে না পারলে ঐতিহ্যবাহী এই সমিতি ভয়াবহ সংকটে পড়ে ঐতিহ্য ও সুনাম হারাবে। এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনায় চট্টগ্রাম সমিতির সকল সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ ও বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তারা সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম সমিতি -ঢাকার অফিসের তালা খুলে দিয়ে বহিরাগতদের গ্রেফতার পূর্বক সরিয়ে নেয়ার দাবি করেন। সমিতির কার্যক্রম স্বাভাবিক পরিবেশে না আসলে চট্টগ্রামবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কারণ এই সমিতি চট্টগ্রামবাসীর একমাত্র মিলনমেলা।
উল্লেখযোগ্য যে, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের অহংকার নোবেলজয়ী প্রফেসর ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুস,দেশের অনেক গুণীজন, বরেণ্য ব্যক্তি সহ প্রায় ৪৫০০ আজীবন সদস্য, অসংখ্য সদস্য এই ঐতিহাসিক চট্টগ্রাম সমিতি -ঢাকার সাথে মনপ্রাণে জড়িত। তাই চট্টগ্রামবাসীর মনপ্রাণ ও মিলন মেলা এই চট্টগ্রাম সমিতির কার্যক্রম চালু করতে সমিতির সকল গুণীজন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।