
আলেমা মুবাশশিরা
আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে এমন এক লাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করেছিল যখন আরবের পথঘাট, পাহাড়-পর্বত, মরুভূমির বালুকারাশি ছিল পাপাচারে জর্জরিত বনি আদমের কর্মকাণ্ড ছিল অশালীন তারা পৌঁছে গিয়েছিল জাহিলিয়াতের অতল গহবরে। খুনোখুনি,হানাহানি, মারামারি, অশ্লীলতা আর বেহায়াপনায় ছিল তারা কঠিনভাবে লিপ্ত। তাদের মাঝে ছিল না নারীদের নিরাপত্তা ও মান সম্মান । নারী হয়ে জন্ম নেয়ার অপরাধে জন্মদাতা পিতার হাতে জীবিত কবরস্থ হতে হতো। নারীকে মনে করা হতো কেবল ভোগের সামগ্রী । ঠিক এমনই এক লাজুক ও সংকটময় পরিস্থিতিতে অধিকার বঞ্চিত নিরাপত্তাহীন নারী জাতিকে ইসলাম ধর্ম প্রদান করেছে যথাযথ অধিকার ও নিরাপত্তার বিধান। ভূপৃষ্ঠে আগমন ঘটে মানবতার মুক্তির দিশারী মোহাম্মাদে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর। তিনি নারী জাতিকে লাঞ্ছনা- বঞ্চনা আর অপমানের থাবা থেকে রক্ষা করে সম্মানের আসনে উন্নীত করেন। ইসলাম নারীর জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত সকল পর্যায়ের নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত করেছেন । যখন কোন নারী জন্মগ্রহণ করে তখন থেকে শুরু করে বিবাহের আগ পর্যন্ত তার দায়িত্ব ইসলাম দিয়েছে পিতার ওপর , বিবাহের পর থেকে বার্ধক্য উপনীত হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব স্বামীর উপর আর বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তার দায়িত্ব ইসলাম দিয়েছে ছেলের উপর। আর এভাবে ইসলাম নারীকে সম্মানের রাজ সিংহাসনে সমাসীন করেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল: পাশ্চাত্যের ভয়াবহ ভাইরাস আজ আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। আর এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একশ্রেণীর তথাকথিত নারীবাদী ও প্রগতিবাদীরা আমাদের দেশের সরল মনা নারীদেরকে স্বাধীনতা ও প্রগতির স্লোগান শেখায়। তারা নারীদের ঘর থেকে বের করে রাস্তায় পুরুষদের কাতারে দাঁড় করাতে চাই। ওরা বলে নারীরা যদি স্বীয় পরিবারের কাছ থেকে স্বামী- সন্তান বা পিতামাতার জন্য সংসারের কাজ করে সেটা নারীর জন্য বন্দিত্ব আর অপমানের। আর সেই নারীরা যখন ঘন্টার পর ঘন্টা শপিং সেন্টারে, সেলস গার্ল হয়ে মুচকি হেসে ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করে অথবা অফিস আদালতে বসের মনোরঞ্জনের জন্য নিজেকে আকর্ষণীয় রূপে পেশ করে তখন তা হয় স্বাধীনতা। ধিক্কার জানাই এমন স্বাধীনতা কে!!
মূলত নারীবাদীরা সমাজের মধ্যে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা বিস্তার করার অসৎ উদ্দেশ্যে নারীদেরকে সম অধিকার ও সমমর্যাদার স্লোগান শেখায়। আর এক শ্রেণীর নারীরাও গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে।
কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো নারী সমাজ বর্তমানে যে স্বাধীনতা ও প্রগতির দিকে ছুটছে সে স্বাধীনতা আমাদের নারীদের দিয়েছে একরাশ লাঞ্ছনা-বঞ্চনা আর অপমান। আজ নারীরা পথে-ঘাটে ‘অফিস-আদালতে সর্বত্রই হচ্ছে ধর্ষণের শিকার। থার্টি ফাস্ট নাইটে টি এস সি চত্বরে নারীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে প্রকাশ্যে রাজপথে। তাই পর্দা প্রগতির পথে বাধা নই বরং পাশ্চাত্যের নগ্ন সংস্কৃতিতে বিভোর লম্পট মার্কা জানোয়ারদের পশুদের পথে বাধা। ইসলাম নারীর নিরাপত্তা বিধানে নিরাপত্তা বলে তৈরি করে দিয়েছে ; দূরে কোথাও যেতে হলে অবশ্যই মাহরাম পুরুষকে বডিগার্ড হিসেবে সাথে নিয়ে যাওয়ার বিধান দিয়েছে ইসলাম। মায়ের জাতিকে মর্যাদার সর্বোচ্চ আসনে সমাসীন করেছে। অথচ নারীবাদী ও প্রগতিবাদীরা ইসলামের এসব নিরাপত্তা বিধানকে তাদের জন্য বন্দিত্ব ও স্বাধীনতার অন্তরায় মনে করে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকল মা-বোনদের সঠিক বিষয় উপলব্ধি করার তৌফিক দান করুন ।আমীন।