গাজীপুরের শ্রীপুরে সরঃ প্রাঃ বিদ্যালয়ের দুইজন সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অভিযোগঃ পরিশেষে বিভাগীয় মামলা।

News News

Admin

প্রকাশিত: ৭:৫৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৪, ২০২৫

শ্রীপুর প্রতিনিধিঃ
গাজীপুর জেলা শ্রীপুর উপজেলার ১২৭ নং পশ্চিম নিজমাওনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ ছানোয়ার হোসেন এবং তার স্ত্রী শিক্ষিকা মোছাঃ শেলিনা আক্তার এর বিরুদ্ধে অভিযোগ সমূহ ‘ সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি অসদাচরণের পর্যায় ভুক্ত অপরাধ। সে মোতাবেক তাদের উভয়ের বিরুদ্ধে – সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ২(খ), ৩(খ)ধারা মোতাবেক বিভাগীয় মামলা রুজু করেন শ্রীপুর উপজেলা সরকারি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফাতেমা নাসরিন এবং উক্ত বিধিমালার ৪(৩) এর উপবিধি (ঘ) মোতাবেক তাদের কে চাকুরি হতে কেন রবরখাস্ত ( Dismissal from Service) করা হবেনা তার সাফাওয়ারী জবাব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে জমা দিতে বলা হয়।
নিকট অতীতের স্বনামধন্য এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান বর্তমানে ক্রমাগত নিম্নমূখী হওয়ায় এবং শিক্ষকগণের- অশিক্ষক সুলভ অসদাচরণের কারণে দিন দিন ছাত্র সংখ্যা কমে যাচ্ছে। দীর্ঘ্যদিন যাবৎ এই প্রতিষ্ঠানের দাতা সদস্য, ছাত্র অভিভাবক, সাবেক ছাত্র, শিক্ষা অনুরাগী এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ শিক্ষার মান উন্নয়নের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে পরিশেষে, সহকারী শিক্ষক মোঃ ছানোয়ার হোসেন এবং সহকারী শিক্ষিকা তার স্ত্রী মোছাঃ শেলিনা আক্তার এর বিরুদ্ধে শ্রীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এবং গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর দুটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে ছাত্র অভিভাবক, দাতা সদস্য, শিক্ষা অনুরাগী এবং গণ্যমান্য সহ ৫০ জন স্বাক্ষর করেন। অভিযোগে উল্লেখ থাকে যে, সহকারী শিক্ষক মোঃ ছানোয়ার মাস্টার স্থানীয় শিক্ষক হওয়ায় প্রধান শিক্ষকের কমান্ড মেনে চলত না, তার সাথে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যসহ তুইতুকারি ব্যবহার,একাধিক বার প্রধান শিক্ষকের গায়ে হাত তুলে,সর্বসময় বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি দিয়ে থাকে। প্রধান শিক্ষক চৌকসকে জানান – “আমি সহকারী শিক্ষক ছানোয়ার হোসেন এবং তার স্ত্রী সহকারী শিক্ষিকা সেলিনা আক্তারের নিকট অসহায়। আমি এবং এসএমসি কমিটি বারবার উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর মৌখিক অভিযোগ দায়ের করেও কোন প্রকার প্রতিকার পাইনি। তাই ঢিলেঢালাভাবে স্কুলের কার্যক্রম চলছে। শিক্ষার মান নিম্নগামী হওয়ায় দিন দিন স্কুলের ছাত্র সংখ্যা কমেই যাচ্ছে। তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন – ছানোয়ার মাস্টার এবং তার স্ত্রী সেলিনা আক্তার সর্বদাই শ্রেণী কক্ষে যথাযথ পাঠদান না করে বরং প্রাইভেট নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন। স্কুল কক্ষে প্রাইভেট পড়ানোর কারণ জানতে চাইলে আমাকে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করে। প্রাইভেট পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি ক্লাসে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। পরীক্ষার খাতায় তাদেরকে বেশি বেশি নাম্বার দিতেন অন্যদিকে মেধাবী ছাত্রদেরকেও প্রাইভেট না পড়ায় নাম্বার কম দিতেন এবং যতপ্রকার অপকৌশল সবগুলি এই দুই শিক্ষক প্রয়োগ করতেন। যারা প্রাইভেট না পড়তো ক্লাসে তাদেরকে বিভিন্ন অজুহাতে বেত্রাঘাতসহ মানসিক লাঞ্ছনা চালায় এবং তার কাছে প্রাইভেট পড়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে থাকেন। ছাত্র অভিভাবকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ ছিল তার নিত্যনৈমত্তিক কাজ। এইসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড যখন বারবার দৃশ্যপটে চলে আসে তখনই ছাত্র অভিভাবক, শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ ও এলাকাবাসী সমন্বিতভাবে তার বিরুদ্ধে শ্রীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন।” সাবেক এসএমসি কমিটি চৌকসকে জানান- শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। শ্রীপুর উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা একাধিকবার তাকে সতর্ক করেছেন। তাতে কোন ফল হয়নি। যেই লাউ সেই কদু।
অভিযোগে বিশেষভাবে উঠে এসেছে – অভিযুক্ত উক্ত সহকারি দুইজন শিক্ষক প্রাইভেট নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। প্রাইভেট না পড়লে ছাত্র-ছাত্রীদের উপর ক্লাসে বিভিন্ন অজুহাতে বেত্রাঘাত করতন। ছাত্র অভিভাবকের সাথে তার অসদাচরণের প্রভাব ছিল অত্যধিক বেশি। প্রাইভেট পড়ুয়া ছাত্রদের পরীক্ষায় ইচ্ছাকৃত ভাবেই নাম্বার বেশি দেয়া। স্কুলে নিয়মিত ক্লাস না করা ছিল তার একটি স্থানীয় বড় প্রভাব। এরকম অজস্র অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে।
শ্রীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর অভিযোগ দাখিলের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযোগটি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে ০২/০৭/২৫ ইং ৪ জন সহকারি শিক্ষা অফিসার সরজমিনে এসে তদন্ত করেন। তদন্ত কমিটির আহবায়ক ছিলেন শ্রীপুর উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার মোঃ মনির হোসেন। তিনি চৌকসকে বলেন,আমরা অভিযোগ পাওয়ার পর যথা সময়ে সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে স্বাক্ষরকৃত দাতাগণ, শিক্ষানুরাগী, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের নিকট থেকে অভিযোগের প্রত্যেকটি বিষয়েই সত্যতা পাই। যাচাই-বাছাই করার জন্য পুনরায় তদন্ত করে তার সত্যতা সন্দেহাতীত ভাবে নিশ্চিত হয়ে, আমরা আমাদের তদন্ত রিপোর্ট শ্রীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর প্রেরণ করি।” শ্রীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফাতেমা নাসরিন চৌকসকে বলেন,১২৭ নং পশ্চিম নিজমাওনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ ছানোয়ার হোসেন এবং সহকারী শিক্ষিকা মোছাঃ শেলিনা আক্তারের বিরুদ্ধে অত্র বিদ্যালয়ের ছাত্র অভিভাবক,শিক্ষানুরাগী এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক দাখিলকৃত অভিযোগটি গুরুত্ব সহকারে আমলে নেই। যথা সময়ে তদন্ত করে অপরাধসমূহ চিহ্নিত করে ০৮/০৮/২৫ইং তারিখে গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জ্বনাব মোঃ মাসুদ ভুঁইয়া এর নিকট প্রেরণ করি। তিনি আরো বলেন, পশ্চিম নিজমাওনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত সূচনীয়। কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন। আমরা চাই সকলের সহযোগিতার মাধ্যমে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মানের উত্তরণ ঘটুক।
গাজীপুর জেলা শিক্ষা অফিসার মাসুদ ভূঁইয়া চৌকসকে বলেন, ১২৭ নং পশ্চিম নিজমাওনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র অভিভাবক, শিক্ষানুরাগী এবং গণ্যমান্য কর্তৃক ৫০ জনের স্বাক্ষরিত অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদনটি ০৮/০৮/২৫ ইং তারিখে হাতে পেয়েছি। আমরা আলোচনা করছি। যেহেতু এটি একটি বিভাগীয় মামলা সেহেতু একটু সময় লাগছে।
লিখিত অভিযোগে বাদী মোঃ সাইদুল ইসলাম (পিতা মৃত নূর মোহাম্মদ) বলেন, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণের মধ্যে কোন প্রকার সুসম্পর্ক নেই। এক শিক্ষক অন্য শিক্ষকের সাথে কথা পর্যন্ত বলে না। দায় সারা কার্যক্রম চলছে। এরা ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দিচ্ছে। সকল কিছুর মূলে সহকারী শিক্ষক মোঃ ছানোয়ার হোসেন এবং সহকারি শিক্ষিকা মোছাঃ শেলিনা আক্তার। স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে স্কুলটিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে এরা। বিস্তারিত অভিযোগ পত্র আছে। যেহেতু অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণিত , তাই আমরা চাই এই দুইজন সহকারি শিক্ষককের বিরোদ্ধে কতৃপক্ষ যেন দ্রততার সহিত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করে স্কুলটিকে রক্ষা করেন।” তিনি আরও বলেন, “স্কুলের অফিস কক্ষ থেকে একজন সহকারী শিক্ষিকার একটি অ্যান্ড্রয়েড সেট অন্য একজন শিক্ষক চুরি করে নিয়ে যায়। এতে এলাকা তথা গ্রাম ব্যাপি সমালোচনার ঝড় উঠে। ”
দরখাস্তকারী এলাকাবাসী সহ সমস্ত ছাত্র অভিভাবক বৃন্দ বলছেন – অভিযোগ করার পর প্রায় এক বছর চলে গেছে। এখন পর্যন্ত আমরা কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছিনা, জানি না প্রভাব আর টাকার নিচে চাপা পরে এই এলাকার ভবিষ্যৎ ফুলগুলো কলিতেই ঝরে যাবে কিনা! যদি আমরা সুষ্ঠু বিচার না পাই তাহলে আগামী বছর আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে এই স্কুলে দেব না।
একজন বৃদ্ধ দাতা সদস্য কান্না ভেজা কন্ঠে আক্ষেপ করে বলেন -” কত আশা করে স্কুলের জন্য আমরা জমি দিলাম, আর এখন মৃত্যর আগ মূহুর্তে এসব কি দেখছি !এই দুইজন শিক্ষকের কার্যকলাপে সবাই ক্ষুব্ধ এবং বিরক্ত। যদি এদের শাস্তি না হয় তাহলে সবাই মুখ ফিরিয়ে নেবে। আগামী বৎসর এই স্কুলটা হয়তো থাকবে, কিন্তু ছাত্র থাকবেনা।
পরিশেষে

শিক্ষার নামে প্রাইভেট ব্যবসা এবং এর জেরে কোমলমতি ছাত্রদেরকে নির্যাতন কিছুতেই কাম্য নয়–! যেহেতু, সহকারী শিক্ষক দুইজনের বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ গুলো তদন্তে প্রমাণিত এবং বিভাগীয় মামলা দায়ের হলেও এখনো চূড়ান্ত রায় হয়নি; তাই এলাকাবাসী দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ক্ষুব্ধ, অভিভাবকরা খুবই নৈরাশ্য এবং হতাশা প্রকাশ করেছেন। তারা প্রয়োজনে মানব বন্ধন করতেও প্রস্তুত। শিক্ষানুরাগী এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, দ্রুততম সময়ে সঠিক পদক্ষেপ না নিলে অচিরেই বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থী শূন্য হয়ে পড়বে এবং শিক্ষার মান আরও খারাপ হবে। ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ একেবারেই অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পরবে।