খুলনার দিঘলিয়ায় চালের দাম বৃদ্ধি: ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ

প্রকাশিত: ১২:৫৫ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১০, ২০২৫

ওয়াহিদ মুরাদ, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে হঠাৎ করেই সব ধরনের চালের দাম বেড়ে গেছে। সম্প্রতি স্বর্ণা, বালাম, মিনিকেট, আতপসহ প্রায় সব জাতের চালের কেজি প্রতি দাম ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। মাসের শুরুতেই খরচের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন অধিকাংশ পরিবার।

পথের বাজার, গাজিরহাট বাজার, কোলা বাজার, সেনহাটি বাজার ও বারাকপুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। বাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে, যেখানে কিছুদিন আগেও ছিল ৬৫ টাকা। বালাম ও স্বর্ণা চালের ক্ষেত্রেও একই রকম উর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

 

ভ্যান চালক রমজান আলী বলেন,

“আমরা দিনমজুর মানুষ। প্রতিদিন যা কামাই করি, তা দিয়েই সংসার চলে। এখন চালের দাম এমন হারে বাড়লে খাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে।”

একইভাবে ইজিবাইক চালক সেলিম শেখ বলেন, “গাড়ি চালিয়ে দিনে ৪০০ টাকা পাই, তার মধ্যে সব টাকাই বাজার করতে চলে যায়। বর্তমানে চাল কিনতেই প্রায় সব টাকা ব্যয় হয়ে যায়, অন্যান্য বাজার তো পড়েই থাকলো। এ অবস্থায় ওষুধপত্তই বা কিভাবে কিনব এবং ছেলেমেয়েদের পড়াশোনাই বা কিভাবে চালাবো?

 

রাজমিস্ত্রি জব্বার বলেন,

“আমাদের তো আর মাসের শুরু কিংবা শেষ বলে কিছু নেই। প্রতিদিনের আয়ে সংসার চলে। এখন চালের দাম এভাবে বাড়লে বাজার করা অসম্ভব হয়ে যাবে।”

কাঠমিস্ত্রি নজরুল ইসলাম মনে করেন,

“চালের দাম বেড়ে গেলে সবকিছুরই দাম বেড়ে যায়। একটা ভারসাম্য থাকা দরকার। সরকার যদি মনিটরিং করতো, তাহলে ব্যবসায়ীরা এমন বেআইনি সুযোগ নিতে পারত না।”

 

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল মালিকদের কাছ থেকেই চালে বেশি দাম দিতে হচ্ছে, ফলে তারাও বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন। তবে ভোক্তারা বলছেন, এই অজুহাত দীর্ঘদিনের পুরনো কৌশল।

সমস্যা সমাধানে করণীয়:

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারের নজরদারি জোরদার করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের নিয়মিত বাজার তদারকি ও মূল্য নির্ধারণে কঠোর পদক্ষেপ জরুরি। এছাড়া সরকারি ট্রেডিং কর্পোরেশন (টিসিবি) এর মাধ্যমে কম দামে চাল সরবরাহ কার্যক্রম সম্প্রসারণ করলে সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তি পাবে।

চালের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল ইসলাম বলেন, “যদি কোনো ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাজার পরিস্থিতি মনিটরিং আরও জোরদার করা হবে।” তিনি আরও জানান, ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় উপজেলা প্রশাসন সর্বদা সজাগ রয়েছে।

শেষ কথা:

চালের মূল্যবৃদ্ধি কেবল একজন ভোক্তার সমস্যা নয়, এটি একটি সামগ্রিক অর্থনৈতিক চাপ। দিঘলিয়ার সাধারণ মানুষের স্বস্তির জন্য জরুরি ভিত্তিতে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও বিকল্প সরবরাহ ব্যবস্থার বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি।