জমে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী হাতিরদিয়ার কুরবানির হাটের পশু কেনাবেচা
Dainik
Choukos


(নরসিংদী) প্রতিনিধি: পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে জমে উঠেছে নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী হাতিরদিয়া কুরবানির হাট। ব্রম্মপুত্র নদীর পাড় ঘেঁষে, গাজীপুর ও নরসিংদী জেলার সীমান্তবর্তী স্থানে অবস্থিত এই হাটে আজ ছিল উপচে পড়া ভিড়। সকাল থেকেই আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা ছাড়িয়ে দূরদূরান্তের ক্রেতা-বিক্রেতারা দলে দলে ভিড় করেন এই ঐতিহ্যবাহী হাটে।
প্রচণ্ড বৃষ্টি কিংবা যানজট, কোনো কিছুই থামিয়ে রাখতে পারেনি কুরবানির পশুর হাটের উদ্দীপনা। গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ থেকে শুরু করে বড় আকারের বলদ পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে হাটজুড়ে। পশুর মান, আকার এবং স্বাস্থ্যগত অবস্থা যাচাই করে তবেই দরদাম করছেন ক্রেতারা। অনেকেই বলছেন, “এই হাটে দাম একটু বেশি হলেও গরুগুলো ভালো – স্বাস্থ্যবান, পরিপাটি এবং খামারিদের পরিচর্যায় বড় হওয়া।”
হাজারো মানুষের মিলনমেলায় পরনত হয়ে উঠেছে এই হাট।
হাটকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে এক ধরনের লোকজ উৎসবের আমেজ। অনেকটা মেলা যেন বসে গেছে এখানে। হাটে দেখা গেল বিভিন্ন বয়সী মানুষ, কেউ পরিবারে ছোটদের নিয়ে , কেউ বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে এসেছেন পছন্দের পশু কিনতে। ছোট শিশুরা খুশিতে গরুর পেছন পেছন ঘুরছে, ছবি তুলছে, কেউবা আবার খাবারের দোকানে ব্যস্ত।
একজন গরু বিক্রেতা, গাজীপুর থেকে আসা জসিম উদ্দিন বলেন, “প্রতিবারই এই হাটে আসি। বেচাবিক্রি ভালো হয়। এবার পাঁচটা গরু এনেছি, ইতিমধ্যে তিনটা বিক্রি হয়ে গেছে।”
যদিও হাটটি জমজমাট, তবে কিছু সমস্যা রয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বিশেষ করে পশুবাহী গাড়ি ঢোকার সময় রাস্তার সংকীর্ণতা ও যানজটের কারণে ভোগান্তি হয়। তবুও হাট কমিটির পক্ষ থেকে নিরাপত্তা, পানি, টয়লেট ও পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা বেশ প্রশংসনীয়।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও হাট আয়োজক কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, শত বছরের পুরোনো এই হাট কেবল পশু বেচাকেনার কেন্দ্র নয়, বরং এটি এ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বড় অংশ। প্রতি বছর কুরবানির সময় এই হাটকে ঘিরে সৃষ্টি হয় বিশেষ এক উৎসবমুখর পরিবেশ।
হাট কমিটির আহ্বায়ক মো. মোস্তফা সিকদার বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি হাটকে আধুনিক ও জনবান্ধব করতে। প্রত্যেক পশুর জন্য আলাদা রাখার জায়গা, ক্রেতাদের বসার ব্যবস্থা এবং পর্যাপ্ত সুরক্ষার দিকগুলো নিশ্চিত করা হচ্ছে।”
সারকথা:
হাতিরদিয়ার কুরবানির হাট কেবল একটি বেচাকেনার স্থান নয়, এটি এক ঐতিহ্যের ধারক। কুরবানির আনন্দ আর লোকজ উৎসবের মিলনে এই হাট হয়ে উঠেছে একটি জীবনঘনিষ্ঠ দৃশ্যপট।