ঘাটাইলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র!

প্রকাশিত: ১:৪১ অপরাহ্ণ, মে ২৫, ২০২৫

ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধিঃ

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ২২ নং বেনিমাধব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা নানা অভিযোগ তুলেছেন। তবে অভিযুক্ত শিক্ষক দাবি করেছেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

প্রধান শিক্ষক মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, “২০১৩ সালের পহেলা এপ্রিল আমি এই বিদ্যালয়ে যোগদান করি। যোগদানের পর থেকেই বিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছি এবং বিদ্যালয়কে ডিজিটালাইজেশন করার লক্ষ্যে প্রতিটি ক্লাসরুমে ডিজিটাল মনিটর স্থাপন করেছি। বর্তমানে ৩টি ক্লাসরুমে ডিজিটাল মনিটরের মাধ্যমে পাঠদান পরিচালিত হচ্ছে এবং সকল শিক্ষার্থী আনন্দের সঙ্গে পড়াশোনা করছে।

তিনি আরও জানান, আমাদের বিদ্যালয়ে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। বিদ্যালয়ের ১ একর ৪ শতাংশ জায়গাজুড়ে একটি বিশাল মাঠ রয়েছে, যেখানে গরু চরানো, খড়কুটো শুকানোসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চলে। রাত্রিবেলায় সেখানে হিরোইন সেবনকারীদের আড্ডা বসে। বিভিন্ন সময় বিদ্যালয়ের বারান্দায় পায়খানা করে রাখা হয়, এমনকি পানির ট্যাংকির মধ্যেও পায়খানা করার মতো জঘন্য কাজও করে থাকে কিছু লোক। আমি এসব কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার চেষ্টা করি।

এসব কাজে বাধা দেওয়ার ফলে এলাকার কিছু ব্যক্তি ক্ষুব্ধ হয়ে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। আজ (২২মে) সেই অভিযোগের তদন্ত হয়েছে। তদন্তে তিনজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন, যারা নিয়মিতভাবে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। আমি আশাবাদী, তদন্তে আমার কোনো ভুল বা ত্রুটি পাওয়া যাবে না।

আমি সব সময় বিদ্যালয় এবং শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। শিক্ষার্থীরা আমাকে ভালোবাসে। যদি ‘প্রিয় শিক্ষক’ বিষয়ে রচনা লিখতে বলা হয়, তবে আমার নামই শিক্ষার্থীরা লিখবে—এটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা।

বিদ্যালয়ের একাধিক অভিভাবক জানান, প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ একজন সৎ, দায়িত্বশীল ও নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক। তিনি শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান করেন এবং বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশ উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছেন।

বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানায়, “আমাদের স্কুলে খুব ভালোভাবে পড়ালেখা করানো হয়। স্যার আমাদের খুব যত্ন নিয়ে পড়ান এবং অনেক আদর করেন। ম্যাডামরাও আমাদের খুব ভালোবাসেন ও আন্তরিকভাবে দেখাশোনা করেন।

আরেকজন বলে, স্যার আমাদের সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করেন। ক্লাস শেষে তিনি আমাদের দিয়ে নাচ, গান, কবিতা পাঠ করান এবং লেখাপড়াও ঠিকমতো করান।

“সহকারী শিক্ষক মিলি খাতুন বলেন, “এখানকার শিক্ষার্থীদের কোনো অভিভাবক অভিযোগ করেননি। অভিযোগ করেছেন এলাকার কিছু লোকজন, যারা নিয়মিত আমাদের স্কুল মাঠে ধান মারাইয়ের কাজ করেন এবং খড় শুকাতে দেন। প্রধান শিক্ষক এসব কাজে বাধা দিয়েছেন বলে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা শিক্ষকরা চাই স্যার আমাদের মাঝেই থাকুন। স্যারের নেতৃত্বে আমরা স্কুলে একটি সুন্দর পরিবেশে কাজ করছি। তিনি যতদিন চাকরি করবেন, আমরাও ততদিন স্যারের পাশে থেকে একসঙ্গে কাজ করতে চাই।”

এ বিষয়ে অন্য এক সহকারী শিক্ষিকা হাসিনা খাতুন বলেন, “প্রধান স্যারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি সবসময় নিয়ম মেনে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের কাছে তিনি একজন শ্রদ্ধেয় মানুষ।”

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু সাঈদ বলেন, “প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করে তাকে হয়রানি থেকে মুক্ত রাখার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন।