বৃদ্ধার লালসার শিকার প্রতিবন্ধী নারীর সন্তান প্রসব, আতঙ্কে ভুক্তভোগী পরিবার

প্রকাশিত: ১২:১২ অপরাহ্ণ, মে ২৫, ২০২৫

কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ কক্সবাজার সদরের পিএমখালীতে প্রতিবেশী বৃদ্ধার লালসার শিকার হতদরিদ্র এক অন্ধ বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নারী (২৮) কন্যা সন্তান প্রসব করেছেন।

গত ১৩মে মঙ্গলবার কক্সবাজার সদর হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ওই ধর্ষিতা নারী কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। এই ঘটনায় অভিযুক্তদের হুমকি ধমকিতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে ভুক্তভোগী অসহায় পরিবার।

ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড ছনখোলা ঘোনাপাড়া গ্রামএ।

জানা যায়, নানা প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে কয়েক দফায় ধর্ষণ করেছে বলে জানায় ভুক্তভোগী। ধর্ষণের অভিযোগ বাড়ির একই সীমানায় বসবাসরত (প্রতিবেশী) হেলাল উদ্দিন (৭৫) এর বিরুদ্ধে। ধর্ষণের শিকার তরুণী গর্ভবতী হওয়ার পর বিষয়টি জানাজানি হলে ধামাচাপা দিতে অভিযুক্ত ও অভিযুক্তের পরিবারের নিকটাত্মীয়রা দীর্ঘদিন ধরে মীমাংসার নামে প্রহসন ও নানাভাবে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের।

তারা বলেন, নির্যাতিত নবজাতকের মা সহ পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে অভিযুক্তরা। এতে আতঙ্কে রয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার। ধর্ষিতা ও তার নবজাতক কন্যার জীবন নিয়ে শঙ্কিত তারা।

একটি স্থানীয় সূত্র জানায়, ঐ নারী জন্মাগত ভাবেই অন্ধ প্রতিবন্ধী। হতদরিদ্র পরিবার, এলাকার মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় চলে তাদের জীবনের চাকা। তাদের বাড়ির সীমায় লাগোয়া অভিযুক্ত হেলাল উদ্দিনের ঘরবাড়ি। পরিবারের একজন সদস্যের মতো প্রায় সময় আসা-যাওয়া করতো তাদের বাড়িতে। ছিল সুন্দর সম্পর্ক। প্রায় ৯-১০ মাস আগে ধর্ষণের শিকার হয়। ধর্ষিতা নারী গর্ভবতী পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পারেন ধর্ষণের ৭/৮ মাস পর। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। অভিযুক্ত হেলাল উদ্দিন তাকে বিয়ে করবেন বলে পরিবারকে জানান এবং ঘটনা কাউকে না জানাতে অনুরোধ করেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে সালিশী বৈঠক হয়। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রতিবন্ধী নারী ও গর্বের সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে একটি সন্তোষজনক সমাধান করা হয়েছে।

প্রতিবন্ধী নারীর ভাই রমজান বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, অন্ধ বোন ও বাচ্চা নিয়ে কোথায় যাব, কি করব ভেবে পাচ্ছি না। এঘটনার একপ্রকার মীমাংসা করে দেয় স্থানীয়রা। হাসপাতালে বোনের একটি মেয়ে হয়েছে। টাকা পয়সা নাই চিকিৎসা করতে পারছিনা। আমার বোন ও তার সন্তানের একটা ব্যবস্থা চাই প্রশাসনের কাছে। আর অভিযুক্তের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সমাজ কমিটির নেতা হারুন অর রশিদ বলেন, এঘটনা সামজিকভাবে মীমাংসার যোগ্য নয়। ভুক্তভোগী পরিবার হতদরিদ্র, তাদের দুই পয়সা খরচ করে থানা-কোর্ট করে অভিযুক্তের বিচার চাইবে এই সামর্থ নেই। যেকোনো সময় আমরা তাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করে থাকি। তবুও ভবিষ্যৎ বিবেচনায় স্থানীয় এলাকার গণ্যমান্যরা সালিশের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত হেলাল উদ্দিনও অস্বীকার করেনি। অন্ধ নারীর পেটের সন্তান তার বলেছেন। স্থানীয় বিচার সালিশের সিদ্ধান্ত মানবে বলে মত দিলে কয়েকজনের সাথে পরামর্শ করে অন্ধ প্রতিবন্ধী নারী ও তার অনাগত শিশুর ভবিষ্যৎ চিন্তা করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে সমাধান করে দেয়। এতে উভয় পক্ষের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। বিচারের সিদ্ধান্ত একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে অভিযুক্ত ও উপস্থিত সাক্ষীদের স্বাক্ষর সম্বলি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করে উভয় পক্ষকে একটি কপি করে দেয়া হয়েছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ঘটনার সাক্ষী খোকন মিয়া জানান, প্রতিবন্ধী নারী ও তার সন্তানের দিকে চেয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সামাজিকভাবে বসে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সিদ্ধান্ত উভয়পক্ষ সন্তুষ্ট চিত্রে মেনে নিয়েছে। অভিযুক্তের সাথে নারীটির বিয়ের সিদ্ধান্ত হয়।এতে ৬ লাখ টাকার কামিন ধার্য করা হয়। তিন লাখ টাকা নগদ, তিন লাখ টাকা বাকি। ৩ লাখ টাকা নগদ পরিশোধ করবে, তার জন্য তিনবার সময় নেয় তারা। তার জন্য আপাতত মোহরানা বাবত ৪৫ কড়া জমি (পিএফ ল্যান্ড) নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে রেজিস্ট্রি করে লিখে দেই অভিযুক্ত হেলাল উদ্দিনের প্রথম স্ত্রী ও পুত্র ওমর ফারুক। ৩ লাখ টাকা নগদ পরিশোধ করে দিলে তাদের জমি ফেরত দেয়ার কথা উল্লেখ আছে।

তিনি আরো বলেন, অভিযুক্ত হেলাল উদ্দিন ও তার পরিবারের লোকজন এ ঘটনা বিভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তারা পার্শ্ববর্তী কয়েকজন নিরীহ মানুষকে জড়িয়ে জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা লিগেল এইড কক্সবাজার অফিসে অভিযোগ দিয়েছেন। অন্ধ মহিলার জন্য প্রয়োজনে গ্রামবাসি আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন। এঘটনা জানতে পেরে এলাকার মানুষের মধ্যে চাপা ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।

এবিষয়ে অভিযুক্তের সাথে যোগাযোগ চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে অভিযোগ পেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবে বলে জানিয়েছেন
কক্সবাজার সদর থানার এক পদস্থ কর্মকর্তা।