বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা: বর্তমান সংকট এবং উত্তরণের সম্ভাবনা দৈনিক চৌকস দৈনিক চৌকস প্রকাশিত: ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১, ২০২৫ স্টাফ রিপোর্টার: জাহারুল ইসলাম জীবন : বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক সংকট দেশটির সাধারণ মানুষের জন্য এক নতুন মাত্রা নিয়ে হাজির হয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ই আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের পরিস্থিতি এক নতুন দিক নিতে শুরু করে। দেশের ইতিহাসে এই ঘটনা রাজনৈতিক অস্থিরতার একটি বড় টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এরপর থেকেই সন্ত্রাসী হামলা, চাঁদাবাজি, জমি দখল, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জবরদখল, হত্যাকাণ্ড, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি এবং ছিনতাইয়ের মতো অপরাধগুলোর বিস্তার দেখা গেছে। প্রথম দিকে, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বিশেষজ্ঞরা এই ঘটনাগুলোর জন্য একাধিক বিদেশি ষড়যন্ত্র এবং দেশি নেতাদের অস্থিতিশীল ভূমিকা দায়ী করেছিলেন। তবে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে থাকে। প্রশাসনের দুর্নীতি, গোপনীয় চক্রান্ত এবং সরকারী-বেসরকারি ক্ষেত্রে দায়িত্বহীনতার কারণে অরাজকতা আরও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এর ফলে, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতি চরম সংকটের দিকে চলে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক সংকট: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি : অন্যদিকে, দেশে চলমান অর্থনৈতিক সংকটও একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। দেশের সাধারণ মানুষ প্রতিদিনই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে, যখন তারা নিজেদের প্রয়োজনীয় খাবার ও অন্যান্য সামগ্রীর জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে বাধ্য হচ্ছে। এই অস্থির পরিস্থিতি সাধারণ জনগণের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা এবং হতাশা সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষজন সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হচ্ছে। তারা প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে জীবনযাত্রার ব্যয় সামলানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং অভ্যন্তরীণ সংকট তাদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। অস্থিরতার কারণ প্রশাসনের দুর্নীতি ও রাজনৈতিক গোষ্ঠী : বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক মহল দেশটির এই অস্থিরতার জন্য একাধিক কারণে দায়ী করছে। তাদের মতে, প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি এবং কিছু রাজনৈতিক নেতাদের অবৈধ কার্যকলাপ পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, কিছু নামসর্বস্ব তরুণ রাজনৈতিক নেতা, যারা সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে গোপন যোগাযোগ রেখে চলছে, তারা প্রশাসনের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই অরাজকতা সৃষ্টি করছে। এছাড়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ক্ষমতার খেলায় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের চূড়ান্ত দায়িত্বহীনতা জনগণের জীবনে এক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতির ফলস্বরূপ জনগণের মধ্যে আস্থাহীনতা এবং অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে, যা দেশের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সমাধান: প্রশাসনের স্বচ্ছতা : এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন পদক্ষেপের পরামর্শ দিচ্ছেন। প্রথমত, প্রশাসনের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনিক কার্যক্রমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া একান্তভাবে জরুরি। এছাড়া, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আনা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করতে সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং সাধারণ জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের পাশাপাশি, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য জনগণকে আরও বেশি সচেতন করতে সামাজিক প্রচারণা চালানো যেতে পারে। দেশবাসীর সম্মিলিত উদ্যোগের প্রয়োজন : এখন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দেশের সব স্তরের মানুষের একসঙ্গে কাজ করা। সরকার, রাজনৈতিক দল, প্রশাসন এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে সমন্বয় ঘটানো প্রয়োজন। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য একযোগিতায় কাজ করার মনোভাবই দেশের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতির মূল চাবিকাঠি। বিশেষজ্ঞদের মতে, জাতীয় সংকট থেকে উত্তরণের জন্য এখন সময় এসেছে ঐক্যবদ্ধভাবে সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজে বের করার। SHARES সারা বাংলা বিষয়: