টেকসই উন্নয়নের জন্য পরিবেশ সুরক্ষা অপরিহার্য: রিজওয়ানা হাসান দৈনিক চৌকস দৈনিক চৌকস প্রকাশিত: ১০:১৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৫ বিশেষ প্রতিবেদক : বাংলাদেশের শহরগুলোতে ক্রমবর্ধমান দূষণ ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেছেন, “শুধু মেট্রোরেল, দ্রুতগতির ট্রেন, ফ্লাইওভার বা বড় অবকাঠামো নির্মাণ করলেই উন্নয়ন হয় না, যদি আমরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে ব্যর্থ হই। দূষণমুক্ত একটি ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা না গেলে পরবর্তী প্রজন্ম ভয়াবহ সংকটে পড়বে।” তিনি শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। দূষণের ভয়াবহ চিত্র বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাকে বিশ্বের অন্যতম দূষিত শহর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শীতকালে বায়ুদূষণের মাত্রা চরমে পৌঁছায়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ঢাকার দূষণজনিত কারণে প্রতি বছর হাজারো মানুষ বিভিন্ন শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “আমাদের ভাবতে হবে, ঢাকায় রাস্তায় চলাফেরা করা এত কঠিন কেন? কেন আমরা শান্তভাবে বসে চিন্তা করতে পারি না? শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, নদীদূষণ এবং খাদ্যে ভেজাল—সবকিছুই চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। অথচ আমরা এখনো এসব বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছি না। সময় এসেছে দেশকে দূষণমুক্ত করার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করার।” তিনি আরও বলেন, শহরের চারপাশে নির্মাণকাজ, ইটভাটা, অযাচিত গাড়ির ব্যবহার এবং অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে দূষণ মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এসব নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে নাগরিকদের স্বাভাবিক জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়বে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগ ও অনুপ্রেরণা অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার উদ্যোগের প্রশংসা করেন রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, “এ ধরনের উদ্যোগ অনুকরণীয় হতে পারে। আমাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নিতে হবে প্লাস্টিক দূষণ কমানোর জন্য। পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীলতা ছাড়া একটি সভ্য ও টেকসই সমাজ গঠন সম্ভব নয়।” পরিবেশ সুরক্ষায় করণীয় বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে পরিবেশ রক্ষায় নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া জরুরি— দূষণ নিয়ন্ত্রণ: কঠোর পরিবেশ নীতি বাস্তবায়ন করে কলকারখানা ও যানবাহনের নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করা। টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা: অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের সময় পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনা করা। পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিবেশ রক্ষার ওপর বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া। আইন প্রয়োগ: দূষণকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। বর্জ্যে ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন: প্লাস্টিক ও কঠিন বর্জ্যের যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। পরিবেশবান্ধব ভবিষ্যতের আশাবাদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “আমি আশা করি, এখান থেকে যারা পড়াশোনা শেষ করে বের হবেন, তারা দায়িত্বশীল প্রশাসক, করপোরেট কর্মকর্তা বা কর্মী হয়ে পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীল থাকবেন। আপনারা কীভাবে পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে সহায়তা করতে পারেন, সে বিষয়ে পরামর্শ থাকলে আমাকে জানান। আপনাদের মতামত গ্রহণ করে আমরা আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারব।” অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. কাজী মতিন উদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম। উপসংহার : পরিবেশ দূষণ রোধ না করা গেলে দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া টেকসই হবে না, বরং এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য দায়িত্ব নিতে হবে। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের বক্তব্য আমাদের এ বিষয়টিই স্মরণ করিয়ে দেয় যে, উন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাই প্রকৃত টেকসই উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। SHARES জাতীয় বিষয়: