রংপুরে সংঘর্ষ: স্থানীয়দের সঙ্গে হিযবুত তাওহীদের সহিংসতায় ছয়টি বাড়িতে আগুন

প্রকাশিত: ১:১৩ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫

জুবেল আরেফিন, রংপুর ব্যুরো চিফ :

 

রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে হিযবুত তাওহীদের সদস্যদের সংঘর্ষের ঘটনায় ছয়টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে পীরগাছার পারুল ইউনিয়নের ছিদামবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ২৫-৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

 

সংঘর্ষের কারণ: কীভাবে শুরু হলো উত্তেজনা? :

 

হিযবুত তাওহীদের রংপুর বিভাগীয় সভাপতি আবদুল কুদ্দুসের অভিযোগ, স্থানীয় জামায়াত নেতাদের নেতৃত্বে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। তবে জামায়াত নেতারা এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, স্থানীয় সাধারণ জনগণের সঙ্গে হিযবুত তাওহীদের সদস্যদের সংঘর্ষ হয়েছে।

 

পীরগাছা থানার ওসি নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, হিযবুত তাওহীদের একটি কর্মসূচি হওয়ার কথা ছিল মঙ্গলবার। এ উপলক্ষে তাদের কিছু কর্মী খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করেছিলেন। তখন স্থানীয়রা সেখানে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়, যা সংঘর্ষে রূপ নেয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।

 

কিন্তু সংঘর্ষের একপর্যায়ে, একদল লোক হিযবুত তাওহীদের কর্মীদের অবস্থান করা বাড়িগুলোতে হামলা চালায় এবং ছয়টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।

 

সংঘর্ষের পেছনের ঘটনা: 

 

হিযবুত তাওহীদের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি ছিদাম বাজার এলাকার আবদুল কুদ্দুস সংগঠনের বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার তিনি সংগঠনের নেতাদের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানান।

 

রোববার সন্ধ্যায় তার বাড়িতে অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য স্থানীয় একটি ডেকোরেটর থেকে মালপত্র নেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ করা হয়, পারুল ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি নূর আলমের হুমকির কারণে ডেকোরেটরের মালিক সেই মালপত্র ফেরত নিয়ে যান।

 

সোমবার সকাল ১০টার দিকে তৌহিদি জনতার ব্যানারে জামায়াতের সাবেক সভাপতি আলী আহমেদের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। আবদুল কুদ্দুসের অভিযোগ, এই মিছিল তার বাড়িতে হামলা চালায় এবং প্রথম দফায় ছয়টি বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়।

 

তিনি আরও দাবি করেন, “হিযবুত তাওহীদের আস্তানা, খ্রিষ্টানের আস্তানা—ভেঙে দাও, জ্বালিয়ে দাও” স্লোগান দিয়ে তাদের বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়। প্রথম হামলার পর মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে দ্বিতীয় দফায় আরও লোকজন জড়ো হয়ে হামলা চালায়।

 

জামায়াতের বক্তব্য ও পুলিশের পদক্ষেপ :

 

তবে জামায়াতের সাবেক নেতা আলী আহমেদ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “ওরা (হিযবুত তাওহীদ) সন্ত্রাসী। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য এখানে জড়ো হয়েছিল। লক্ষ লক্ষ জনতা থেকে কে বা কারা অগ্নিসংযোগ করেছে, কেউ জানে না। আমি ওখানে যাইনি।”

 

এদিকে, পারুল ইউনিয়নের জামায়াত সভাপতি নূর আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি, কারণ তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

 

পীরগাছা উপজেলা জামায়াতের আমির বজলুর রশীদ বলেন, “এ ঘটনার সঙ্গে জামায়াতের কোনো সম্পৃক্ততা নেই, বরং জামায়াতের লোকজন প্রশাসনকে সহযোগিতা করেছে।”

 

রংপুরের পুলিশ সুপার আবু সাইম বলেন, “কোনো পক্ষই আগে থেকে পুলিশকে বিষয়টি জানায়নি। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়। সেনাবাহিনী ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। তবে এর আগেই সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।”

 

আটক ও তদন্তের অগ্রগতি :

 

ওসি নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, এ ঘটনায় হিযবুত তাওহীদের সাতজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

তবে সংগঠনের নেতা আবদুল কুদ্দুস বলেন, “আমরা হামলার শিকার হয়েছি, অথচ পুলিশ উল্টো আমাদের কর্মীদেরই গ্রেপ্তার করছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছয়জন এবং আমার বাড়ি থেকে আরও চারজনকে আটক করা হয়েছে।”

 

পরিস্থিতি এখন কেমন?:

 

পীরগাছার ছিদামবাজার এলাকায় এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

এ ঘটনায় নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।