মির্জাপুরে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মশাল মিছিল, ৫ দফা দাবিতে বিক্ষোভ দৈনিক চৌকস দৈনিক চৌকস প্রকাশিত: ১:০৯ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫ জহির আহম্মেদ, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা চিকিৎসা পেশার স্বচ্ছতা ও মান নিশ্চিত করার দাবিতে মশাল মিছিল করেছেন। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে কলেজ চত্বর থেকে শুরু হয়ে এই মিছিল টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের সামনে গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, এমবিবিএস ও বিডিএস ছাড়া অন্য কারও চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দেওয়ার বৈধতা থাকা উচিত নয়। তারা অভিযোগ করেন, এসএসসি পাসের পর চার বছরের ম্যাটস কোর্স সম্পন্ন করে অনেকেই চিকিৎসকের পদবি ব্যবহার করছেন, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। কেন উঠল এই দাবি? : বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে চিকিৎসকের স্বল্পতা দীর্ঘদিনের সমস্যা। সেই শূন্যতা আংশিকভাবে পূরণ করতে ২০১০ সালে সরকার মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) শিক্ষার্থীদের জন্য নিবন্ধনের ব্যবস্থা করে। এর মাধ্যমে তারা ‘উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার’ (স্যাকমো) পদবিতে নিযুক্ত হতে পারেন। কিন্তু গত কয়েক বছরে এমবিবিএস ও বিডিএস শিক্ষার্থীরা অভিযোগ তুলেছেন যে, কিছু ম্যাটস শিক্ষার্থী চিকিৎসক পরিচয় ব্যবহার করছেন এবং এমনকি রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন, যা আইনত বৈধ নয়। এই প্রসঙ্গে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) একটি প্রস্তাব দেয় যে, চিকিৎসকের স্বীকৃতি শুধুমাত্র এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রিধারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। তবে ম্যাটস শিক্ষার্থীরা সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করে, যার ফলে বিতর্ক আরও জটিল হয়ে ওঠে। শিক্ষার্থীদের ৫ দফা দাবি : ১. চিকিৎসকের স্বীকৃতি নির্ধারণ: এমবিবিএস ও বিডিএস ছাড়া কেউ ‘ডাক্তার’ বা ‘চিকিৎসক’ পরিচয় ব্যবহার করতে পারবে না। বিএমডিসি রিট ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে। ২. ওষুধের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ: এমবিবিএস ও বিডিএস ছাড়া অন্য কেউ ওটিসি (ওভার দ্য কাউন্টার) ওষুধের বাইরে কোনো ওষুধ লিখতে পারবে না। প্রেসক্রিপশন ছাড়া ফার্মেসিতে ওটিসি তালিকার বাইরের ওষুধ বিক্রি বন্ধ করতে হবে। ৩. চিকিৎসকের নিয়োগ: দ্রুত ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে শূন্য পদ পূরণ করতে হবে। বিসিএস চিকিৎসকদের বয়সসীমা ৩৪ বছর করা এবং প্রতি বছর অন্তত ৪-৫ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিতে হবে। ৪. ম্যাটস ও মানহীন মেডিকেল কলেজ বন্ধ: সকল মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট স্কুল ও অনিয়মতান্ত্রিক মেডিকেল কলেজগুলো বন্ধ করতে হবে। ইতোমধ্যে যারা ম্যাটস থেকে পাশ করেছে, তাদের ‘উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার’ পদবি বাতিল করে ‘মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট’ হিসেবে নিযুক্ত করতে হবে। ৫. চিকিৎসকদের সুরক্ষা আইন: চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন বাস্তবায়ন করতে হবে, যাতে সহিংসতা বা হামলার শিকার হলে দ্রুত বিচার নিশ্চিত হয়। আন্দোলনের ভবিষ্যৎ ও প্রতিক্রিয়া : এই আন্দোলনের সঙ্গে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার আদালতের রায়ের দিকে তারা তাকিয়ে রয়েছেন। এদিকে, ম্যাটস শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা চার বছরের ডিপ্লোমা সম্পন্ন করার পর জনস্বাস্থ্য সেবা প্রদানে নিয়োজিত হন এবং অনেক সময় প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য আসেনি। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, “এই বিষয়ে একটি দীর্ঘমেয়াদী সমাধান খোঁজা হচ্ছে যাতে উভয় পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করা যায় এবং রোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।” বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘদিন ধরে চলা বিতর্ক ও সংকটের নতুন এই মোড় কীভাবে সমাধান হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। SHARES সারা বাংলা বিষয়: