খুলনার বক্ষব্যাধি হাসপাতালের করুণ দশা: সেবার আড়ালে আতঙ্ক

প্রকাশিত: ১:১১ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৫

শেখ রাজু আহমেদ, খুলনা :

খুলনার ফুলবাড়ি গেট মিরের ডাঙ্গায় অবস্থিত সরকারি বক্ষব্যাধি হাসপাতাল মূলত শ্বাসতন্ত্রের রোগীদের জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা প্রদান করে থাকে। এখানে রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ ও খাবার সরবরাহ করা হয়, যা সরকারের একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। তবে হাসপাতালের শারীরিক অবস্থা এতটাই নাজুক যে রোগীরা সেবা নিতে এসে আরও বড় আতঙ্কের সম্মুখীন হচ্ছেন।

 

পরিত্যক্ত ভবনের মতো পরিস্থিতি :

 

হাসপাতালের ছাদ ও পিলারের বিভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, এবং দীর্ঘদিন ধরে এটি কোনো সংস্কার না করায় ভবনটির অবস্থা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। চিকিৎসক ও নার্সরা প্রতিদিন ঝুঁকির মধ্যে থেকে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। হাসপাতালটির এমন বিপজ্জনক অবস্থা নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।

 

রোগীদের আতঙ্ক :

 

রোগীরা জানান, তারা এখানে চিকিৎসা নিতে এসে সবসময় আতঙ্কে থাকেন। এক রোগীর অভিভাবক বলেন, “হাসপাতালের পরিবেশ দেখে মনে হয়, যেকোনো মুহূর্তে ছাদ ভেঙে পড়বে। আমরা চিকিৎসার জন্য এসেছি, কিন্তু এখন জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছি।”

 

হাসপাতালে কর্মরত এক নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আমরা প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছি। রোগীদের সেবা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব, কিন্তু নিজেরাও তো নিরাপত্তার মধ্যে থাকতে চাই।”

 

পরিদর্শনে কী পাওয়া গেল? :

 

আজ দুপুর ২টায় কিছু সাংবাদিক হাসপাতালের খাবার ব্যবস্থা পরিদর্শন করেন। হাসপাতালের খাবারের রুটিন ঠিক থাকলেও, কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সরা ভবনের জরাজীর্ণ অবস্থার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা জানান, ভবনটি যেকোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে, যা রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হতে পারে।

 

প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা :

 

বহুবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে হাসপাতালের বেহাল দশা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও খুলনার জেলা প্রশাসন এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

 

একজন স্থানীয় সমাজকর্মী বলেন, “এটি শুধু একটি হাসপাতাল নয়, এটি বহু মানুষের চিকিৎসার শেষ ভরসা। যদি এখানকার পরিবেশ এতটাই বিপজ্জনক হয়, তাহলে মানুষ সেবা নিতে আসবে কোথায়?”

 

প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপের অভাব এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণে রোগীদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তবে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যায়।

 

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ :

 

এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন, অবিলম্বে হাসপাতালটির সংস্কার কার্যক্রম শুরু করা হোক, যাতে রোগীরা সুষ্ঠুভাবে চিকিৎসা নিতে পারেন এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরাপদে কাজ করতে পারেন।