ইজতেমা মাঠে চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় আইইউবিএটি’র সমন্বয়কের ওপর হামলা: আটক ২

প্রকাশিত: ২:৩২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৩১, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে দোকানপাটে চাঁদাবাজি বন্ধের প্রতিবাদ করায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় দুই অভিযুক্তকে আটক করেছে। আহত শিক্ষার্থীরা দ্রুত বিচার এবং হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

চাঁদাবাজি: পবিত্র ইজতেমা আয়োজনেও ছায়া

৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার মাঠের পশ্চিম পাশের রানাভোলা এভিনিউতে কিছু ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, স্থানীয় একটি চক্র অবৈধভাবে দোকানদারদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করছে। চাঁদার অঙ্কও কম নয়—দশ হাজার টাকা। চাঁদা না দিলে দোকান সরিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছিল তারা।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে দোকানদারদের এই অভিযোগ পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন আইইউবিএটির শিক্ষার্থী ও স্থানীয় কয়েকজন। তারা চাঁদাবাজদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এই প্রতিবাদ করতে গিয়েই হামলার শিকার হন শিক্ষার্থীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দোকানদারদের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীরা চাঁদাবাজদের বাধা দিলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। অতর্কিত হামলায় কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। পরে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই হামলাকারীকে আটক করে।

আহতদের বিবরণ

হামলায় আহত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ওমর ফারুক (যুবরাজ) সংবাদ সম্মেলনে বলেন- “আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন করেছি দেশের নানা অন্যায়ের বিরুদ্ধে। অথচ ইজতেমার মতো একটি পবিত্র আয়োজনের সময়ও চাঁদাবাজি দেখা যাচ্ছে। এটি মেনে নেওয়া যায় না। চাঁদার দাবি প্রত্যাখ্যান করায় আমাদের ওপর সন্ত্রাসীরা হামলা চালায় এবং হত্যার হুমকি দেয়।”

অন্য এক শিক্ষার্থী জানান,“আমরা চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি। এ জন্য আমাদের আক্রমণ করা হয়েছে এবং দোকানদারদেরও আতঙ্কিত করা হয়েছে।”

আটক ও মামলা

ঘটনার পর উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। সাব্বির মিয়া (২২) এবং ফজলে রাব্বি (২৮) নামে দুই অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১৫-২০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে মামলা করা হয়েছে।

উত্তরা পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, “ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আমরা হামলাকারীদের আটক করেছি। মামলা দায়ের হয়েছে এবং আমরা তদন্ত শুরু করেছি। চাঁদাবাজি এবং হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

দোকানদার ও শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ

এই ঘটনায় ইজতেমা এলাকার স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এক দোকানদার বলেন, “আমরা এমনিতেই কম আয়ে দোকান পরিচালনা করি। তার ওপর চাঁদার চাপ আমাদের জন্য অসহনীয়।”

শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “চাঁদাবাজদের এমন কার্যক্রম পুরো সমাজকে কলুষিত করছে। প্রশাসনের উচিত এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া।”

নিন্দা ও প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি

ইজতেমা ময়দানের পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রাখতে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি বলেন, “চাঁদাবাজি এবং হামলার ঘটনায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক আছি।”

নতুন প্রশাসনের প্রতি আহ্বান

আহত শিক্ষার্থী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, চাঁদাবাজি বন্ধে ত্বরিত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তারা আরও বলেন, এ ধরনের ঘটনা ইজতেমার মতো ধর্মীয় আয়োজনের ভাবমূর্তি নষ্ট করে।

বিশ্ব ইজতেমার সময় এমন হামলা ও সহিংসতার ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ এবং আতঙ্ক বিরাজ করছে।