গাছ কাটতে অনুমতি বাধ্যতামূলক: হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়

প্রকাশিত: ১২:০৬ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৯, ২০২৫

জাহিদ:

গাছ কাটতে অনুমতি বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে গ্রাম পর্যায়ে ব্যক্তি মালিকানার গাছ কাটতে অনুমতি লাগবে না বলে জানিয়েছেন রিটের পক্ষের আইনজীবী।

 

বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ আজ এই রায় দেন।

 

রুলের পটভূমি ও রায় : 

 

মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা এক জনস্বার্থমূলক রিটের শুনানি শেষে আদালত রুল যথাযথ ঘোষণা করেন। আদালতের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, গাছ কাটতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে একটি কমিটির অনুমতি নিতে হবে।

 

ঢাকায় এই কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে। সাত দিনের মধ্যে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, পরিবেশবাদী, এবং ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকদের সমন্বয়ে এই কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে।

 

জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠনের জন্য জনপ্রশাসন সচিবকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

 

জেলা ও উপজেলা কমিটির কাঠামো

 

জেলা কমিটি:

জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটিতে জেলা পরিবেশ কর্মকর্তা, সরকারি কলেজের একজন শিক্ষক, স্থানীয় সমাজকর্মী, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক, এবং সিভিল সার্জন অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।

 

উপজেলা কমিটি:

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটিতে স্থানীয় কলেজের অধ্যক্ষ, সমাজকর্মী, পরিবেশবাদী, সমাজ কল্যাণ কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি), এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী থাকবেন।

 

পরিবেশ রক্ষায় রায়ের তাৎপর্য : 

 

রিটের পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, “এই রায়ের ফলে নির্বিচারে গাছ কাটার প্রবণতা কমবে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে।”

 

তিনি আরও জানান, আদালত বলেছেন, “দেশে তাপমাত্রা বাড়ছে, ফলে গাছ সংরক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বিচারে গাছ কাটা হলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে, যা মানবজীবনের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে।”

 

সামাজিক বনায়নের পরিবর্তন :

 

হাইকোর্ট ২০২৪ সালে প্রণীত সামাজিক বনায়ন বিধিমালায় পরিবর্তনের নির্দেশ দিয়েছেন। আদালত বলেন, “সামাজিক বনায়নের গাছ না কেটে গাছের বাজার মূল্য নির্ধারণ করে তা উপকারভোগীদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে।”

 

গ্রাম পর্যায়ের গাছ কাটা : 

 

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানিয়েছেন, গ্রাম পর্যায়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন গাছ কাটতে কোনো অনুমতির প্রয়োজন হবে না। তবে জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে যেকোনো গাছ কাটার জন্য সংশ্লিষ্ট কমিটির অনুমতি নিতে হবে।

 

পরিবেশ রক্ষার আহ্বান :

 

এই রায় পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। পরিবেশবাদীরা আশা করছেন, এর ফলে গাছ কাটা সংক্রান্ত অপব্যবহার কমবে এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক হবে।