খুলনা বিভাগে অবৈধ ইট ভাটার সয়লাব, নিরব ভূমিকায় প্রশাসন

প্রকাশিত: ৭:২৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৩, ২০২৫

শেখ রাজু আহমেদ, খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধি : খুলনা বিভাগে অবৈধ ইট ভাটার কারণে ব্যাপক বায়ু দূষণ হচ্ছে, যা কৃষি জমি, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকির সৃষ্টি করেছে। এসব ইটভাটার কারণে ফসলের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসছে। পরিবেশবান্ধব চিমনি ব্যবহারের পরিবর্তে ড্রাম চিমনি ব্যবহার করে কাঠ পোড়ানোর ফলে বিষাক্ত গ্যাসের নিঃসরণ ঘটছে। এছাড়া, ভাটায় পুড়ানো বিষাক্ত কয়লার পানি যত্রতত্র ফেলানো হচ্ছে, যা পানি দূষিত করে এবং স্থানীয় জনগণের স্বাস্থ্যকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলছে।

বিভিন্ন অবৈধ ইটভাটার মালিকেরা দাপ্তরিক কাগজপত্র ছাড়াই সংশ্লিষ্ট দফতরের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বছরের পর বছর ধরে অবৈধভাবে ইট পোড়ানোর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং অবৈধ ভাটা মালিকরা প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় এসব ভাটাগুলি দৃশ্যমান হলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা যেন একেবারে নির্বিকার।

এছাড়া, অনেক ইটভাটায় শিশু শ্রমিকদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যারা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। এই শিশুদের মাথায় করে মাটি, কাঠ, কাঁচা ইট এবং পুড়ানো ইট বহন করতে দেখা যায়। এমনকি, কয়লায় আগুন দেওয়ার মতো বিপজ্জনক কাজও তারা করছে। শ্রম অধিদপ্তরের ভূমিকা এখানে রহস্যজনক এবং হাস্যকর। তারা শুধুমাত্র অফিসে বসে এসব প্রতিষ্ঠানের খোঁজখবর রাখেন, কিন্তু মাঠ পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না।

এছাড়া, ইটভাটায় চিমনির উচ্চতা ১২০ ফুট হওয়া উচিত, তবে অধিকাংশ মালিক তা মানছেন না এবং ৪০ থেকে ৬০ ফুট উঁচু চিমনি নির্মাণ করে থাকেন। এতে করে বায়ু দূষণ আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। চিমনির ভিতরে পানি রাখার ব্যবস্থা থাকার নিয়ম থাকলেও অনেক ভাটায় সে নিয়মও মানা হচ্ছে না, যা পরিবেশের জন্য আরো ক্ষতিকর।

এছাড়া, অনেক ইটভাটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কৃষিজমি, সরকারি সড়ক, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, আশ্রয়ন প্রকল্প, কমিউনিটি ক্লিনিক, হাসপাতাল, মসজিদ, মন্দির এবং বাজারের পাশে স্থাপন করা হচ্ছে, যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এমনকি নদীর সরকারি সম্পত্তি দখল করে ইটভাটা স্থাপন করা হচ্ছে।

অবৈধভাবে কাঠ পোড়ানোর কারণে প্রতি এক লাখ ইট পোড়াতে প্রায় এক হাজার মন কাঠ পুড়ে যায়। এই পরিমাণ কাঠ প্রতি মৌসুমে হাজার হাজার কোটি মন পুড়ানো হচ্ছে, যা দেশের বনভূমি ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

এ ব্যাপারে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে পরিবেশবিদরা ও সচেতন নাগরিকরা। অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করতে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এই সঙ্কটের সমাধান করা জরুরি।