আরিফ হাসান গজনবী, রামপাল (বাগেরহাট) : বাগেরহাটের মোংলায় চলন্ত ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে ৭ বছর বয়সী এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে। রবিবার (১২ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মোংলা-খুলনা রেললাইনের দিগরাজ বাজার পয়েন্টে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত শিশুর পরিবারের অভিযোগ: 

রেলক্রসিং গেটম্যান দায়িত্বে না থাকার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটে। রেলগেট না ফেলা এবং সময়মতো সতর্কতা গ্রহণ না করায় ট্রেনটি দ্রুত গতিতে পার হয়ে যায় এবং শিশুটি ট্রেনের নিচে পড়ে যায়।

নিহত শিশুর: 

নাম মরিয়ম (৭)। তিনি তার মা ফাতেমা বেগমসহ মোংলা থেকে বাগেরহাট যাচ্ছিলেন একটি যাত্রীবাহী বাসে। পথিমধ্যে দিগরাজ বাজারে রেলক্রসিং এলাকায় বাসটি আটকে যায় এবং সেই সময় খুলনা থেকে আসা মোংলা কমিউটার ট্রেনটি দ্রুত রেলক্রসিং পার হচ্ছিল। জীবন বাঁচানোর তাগিদে মা শিশুটিকে নিয়ে বাস থেকে নামতে গেলে শিশুটি ছিটকে ট্রেনের নিচে পড়ে যায়।

মৃত্যুর বিষয়টি: 

এ সময় স্থানীয়রা দ্রুত শিশুটিকে উদ্ধার করে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হাসপাতালে নিয়ে যান, কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার আগেই শিশুটি মারা যায়। বন্দর হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডাঃ মোঃ শামীম হাসান মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

বিক্ষোভ ও গেটম্যানের অবহেলা: 

এ ঘটনায় স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে দিগরাজ রেলক্রসিংয়ে দায়িত্ব পালনকারী গেটম্যান মোঃ শাহিনের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন। তারা মোংলা-খুলনা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। পরবর্তীতে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

ছিটকে পড়ে ট্রেনের নিচে চলে যায়: 

নিহত শিশুরমা ফাতেমা বেগম জানিয়েছেন, তিনি দুই সন্তানকে নিয়ে যাত্রীবাহী বাসে বাগেরহাট যাচ্ছিলেন। রেলক্রসিংয়ে বাস আটকা পড়লে তিনি দ্রুত বাস থেকে নেমে আসেন, কিন্তু তার কোল থেকে শিশুটি ছিটকে পড়ে ট্রেনের নিচে চলে যায়।

গেটম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা:

মোংলা রেল স্টেশনের টিকিট মাস্টার মোঃ শরিফুর রহমান জানান, গেটম্যান কেন দায়িত্বে ছিল না, এই বিষয়ে তদন্ত চলছে। তাকে সাত দিনের মধ্যে চাকরিচ্যুত করা হবে এবং নিহত শিশুর পরিবারকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা হবে বলে তিনি জানান।

এ ঘটনায় মোংলা থানার ওসি আনিসুর রহমান জানান, রেল পুলিশ গেটম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে এবং এ ঘটনায় মামলা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।

এটি একটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা, যেখানে দায়িত্ব অবহেলার কারণে একটি শিশুর জীবন হারানোর ঘটনা ঘটেছে।